অতিরিক্ত সেচমূল্য ঠেকাতে রাস্তায় কৃষক

লোহাগাড়া প্রতিনিধি:
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান লকডাউনেও একযোগে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক কৃষক। এ প্রতিবাদ করোনায় লকডাউনে কর্মহীন হয়ে ঘরে আটকে পড়া কৃষকদের খাবার সামগ্রী কিংবা ত্রাণ না পাওযার জন্য নয়। বিএডিসি কর্তৃক নির্ধারিত মুল্যের অতিরিক্ত সেচমূল্য নেয়ায় কৃষকদের এমন প্রতিবাদ।
মঙ্গলবার (৫ মে) বিকেলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার গৌড়স্থান উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন লোহাগাড়া-লামা সংযোগ ডিসি সড়কে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেই মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে এমন প্রতিবাদ জানান কৃষকরা।
একদিকে, প্রাণঘাতী করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান লকডাউন অন্যদিকে পবিত্র রমজানে রোজা রেখে একযোগে ৫শ’ কৃষকের এমন প্রতিবাদ লোহাগাড়াবাসীর দৃষ্টি কাড়ে।
স্থানীয় কৃষক মোহাম্মাদ ফারুক উদ্দিন জানান, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের গৌড়স্থান সরই রাবার ড্যাম প্রকল্পে সেচ খরচ নির্ধারণে বিএডিসি নীতিমালা বাস্তবায়ন, কৃষকদের ধান কাটতে বাঁধা প্রদান, অতিরিক্ত সেচ খরচ আদায় ও কৃষকদের মামলা দিয়ে হয়রানিরোধসহ রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি বাতিলের দাবিতে রবিবার (৩মে) রাবার ড্যামের সুবিধাভোগী কৃষকদের পক্ষ থেকে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ‘র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু এখনো কোন প্রতিকার না পাওয়ায় রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করে এমন প্রতিবাদ করতে হলো স্থানীয় কৃষকদের।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ২০১৯ সালে উপজেলার গৌড়স্থান সরই খালের ওপর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কৃষকদের সুবিধার্থে রাবার ড্যাম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন। ওই সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাজ্বী মোহাম্মদ ইউনুছকে সভাপতি ও জাহাঙ্গীর হোসেন মানিককে সাধারণ সম্পাদক করে রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, সরকার কৃষকদের সুবিধার্থে রাবার ড্যামটি নির্মাণ করেছেন। বিএডিসি নীতিমালা অনুুযায়ী প্রতি কানি জমির সেচ খরচ বাবদ ৮০ টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও গেল বছর আদায় করেছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। চলতি বছর তা বৃৃদ্ধি করে ১ হাজার টাকা দাবী করছেন রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি। যা কৃষকদের ওপর চরম বোঝা এবং রীতিমত নীরব অত্যাচারের শামিল।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌছিফ আহমদ জানান, কৃষকদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি কৃষি কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কৃষকদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সরই রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় পুটিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান হাজ্বী মুহাম্মদ ইউনুছ বলেন, এসব একটি কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র। যেখানে সেচ প্রকল্পের ম্যান্টেনেজ খরচ উঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে সেখানে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সেচ মূল্য নেয়ার প্রশ্নই আসে না। এছাড়াও আপদকালীন একটি ফান্ড করার নির্দেশনা থাকলেও অর্থের অভাবে সেটাও করা যাচ্ছে না। কৃষকদের কাছ থেকে যা টাকা আদায় করা হয় প্রায় সবটুকুই ম্যান্টেনেজে খরচে চলে যায়। সেচ খরচ বাবদ প্রতি কানি ৭০০ টাকা করে নেয়া হয় যা বিএডিসি কর্তৃপক্ষের অনুুমোদন আছে। তাছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে তদন্তও করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক বলেন, আসলে এ গুলো কিছুই না। একটি কুচক্রিমহল কৃষকদের উস্কে দিয়ে রাবার ড্যাম কমিটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ইতোপূর্বেও কৃষকদের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। প্রকল্পের বাৎসরিক খরচের ওপর ভিত্তি করেই সেচ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কানি ৭০০ টাকা। এগুলো অহেতুক বাড়াবাড়ি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, কৃষকের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ইউএনও মহোদয়ের কাছে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।