মাতারবাড়ীতে বিএনপি’র নাম ভাঙিয়ে এস্তেফাজের অপরাধ সাম্রাজ্য

মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বেপরোয়া এস্তেফাজ, আতঙ্কে নেতাকর্মীরা
এস্তেফাজ জমি অধিকগ্রহণে দূর্নীতি মামলায় আসামীও
মহেশখালী প্রতিনিধি: মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এখন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম এস্তেফাজ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপির নাম ভাঙিয়ে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে কোলপাওয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের কাছে ব্যবসার নামে চাঁদাদাবি, স্ক্র্যাপ গাড়ী থেকে চোরাই মালামাল নিয়ন্ত্রণ নামে মোটা অঙ্কের চাঁদাদাবি করে নতুন করে আলোচনায় আসেন বিএনপির এই নেতা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় লিয়াজোঁ করে গড়ে তোলেন অপরাধ সাম্রাজ্য। গড়ে তোলেন নিজস্ব দালাল বাহিনীও। মুলত মাতারবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পে বিচার শালিসের নামে স্থানীয় ক্ষমতা ও আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে লিয়াজোঁ থাকায় ধরাকে সরা জ্ঞান করে টাকার জন্য প্রহসনের বিচার করতেন সাধারণ মানুষের উপর। এদিকে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর এখন অনেকটাই বেপরোয়া তিনি। এস্তেফাজ মাতারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে তিনিসহ তার লোকজনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বেশ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে।
জানা গেছে, মাতারবাড়ীতে ১৪১৪ একর প্রকল্পে জমি অধিগ্রহনের সময় এলও অফিস থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে টাকা উত্তোলন করায় দূর্নীতির মামলার আসামি হয় এস্তেফাজ।

১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমীনসহ ৩৬ জনকে অভিযুক্ত করেন সে সময় আদালত।
মাতারবাড়ির ব্যবসায়ী এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমীন এবং সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাফর আলমসহ ২৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। উক্ত মামলায় মাতারবাড়ী মিয়াজী পাড়ার বাসিন্দা মৃত মৌলভী মোফাজ্জল আহদের পুত্র বর্তমান দাপটু বিএনপির নেতা এস্তেফাজুল হককে ২৩ নং আসামী করা হয়। আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে আসামী হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলতে থাকেন তিনি। বিগত ২০১৮ স সালে ১৭ অক্টোবর বাগিয়ে নেন মাতারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ। একদিকে বিএনপির পদ, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে গড়ে তোলেন অপরাধ সাম্রাজ্য, নিজস্ব দালাল বাহিনী। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের দুঃশাসন ও নির্যাতনে বিএনপি নেতারা যখন ঘরবাড়ি ছাড়া, তখন এস্তেফাজ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য করে চালাতে থাকেন পুলিশ বিটে দালালী, দখলসহ নানা অপকর্ম।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এস্তেফাজ।
এখানেই থেমে থাকেননি এস্তেফাজুল হক। উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের বাংলা বাজার এলাকার ক্ষুদ্র স্ক্রাব ব্যবসায়ী ইসলামের কাছ থেকে এবার ব্যবসা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে মর্মে চাঁদদাবি করেন মাতারবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এত্তেফাজুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মামলা-হামলার হুমকি দিয়ে আসছিলেন তিনি।
স্থানীয় ওই ব্যবসায়ী ভিড়িও বার্তায় তখন জানান- এ ঘটনার মূলহোতা হচ্ছে এস্তেফাজুল ইসলাম।
ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন- (১০ অক্টোবর) সকালে তার ভাঙ্গারি ভর্তি একটি গাড়ি যাচ্ছিলো, পথিমধ্যে এস্তেফাজের কথা বলে গাড়িটি মাঝপথে মাতারবাড়ির পুরান বাজার এলাকায় জোরপূর্বক থামিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত লোকজনের সামনে প্রকাশ্যে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চাঁদা দাবির টাকা অর্ধেকে নেমে আসে। এই ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন- এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা ব্যবসা করবে কিভাবে? তিনি এ নিয়ে বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এই চক্রটি এখনও তাকে নানা ভাবে হুমকি দিয়ে চাপের মুখে তারা জড়িত নাই বলে পুনরায় ভিড়িও বার্তা দিতে বাধ্য করান ওই ব্যবসায়ীকে।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, বিএনপির পদে থেকে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করছেন এস্তেফাজ। তিনি ও তার অনুসারীদের কারণে ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে জনপ্রিয় দলটির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তিনি দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। দলেন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দিবেন বলে ঘোষণা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিজ জানান, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস্তেফাজের হুকুমে মুলত স্ক্র্যাপের গাড়ীটি আমি থামিয়েছিলাম। এবং তিনি নিজে ১ লাখ টাকা চাঁদাদাবি করতে বলছে। ব্যবসায়ী ইসলাম টাকা দিতে রাজি না হলে তিনি নিজে ঘটনাস্থলে এসে টাকা দাবি করে। তিনি দলের সিনিয়র নেতা তাই তার হুকুম পালন করেছি মাত্র। তিনি নিজেকে আড়াল করতে আবার আমার নাম চাপিয়ে দিচ্ছে।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হোছাইন মাসুম বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হয়ে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি এটি দলের জন্য খারাপ বার্তা। এটির জন্য সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
দলের পদে থেকে অপকর্ম করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তারেক রহমানের পরিষ্কার বার্তা—কেউ অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আরিফুল কাদের চৌধুরী বলেন, দলের নাম ব্যবহার করে ব্যবসার নামে কেউ চাঁদাবাজি বা অন্য কোন কিছু করে থাকলে সেটি অপরাধ। এসব কারা করতেছে খবর নিয়ে দলের হাইকমান্ডে জানানো হবে।
মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, দলের নাম ব্যবহার করে কেউ চাঁদাবাজি করার সুযোগ নাই।