হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের নির্দেশে করোনায় সরকারি চাল সহায়তার সঙ্গে নগদ বরাদ্দের টাকা দিয়ে নিজ নিজ এলাকার কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে কর্মহীনদের মাঝে বিতরণ করছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা এতে ৫ হাজার সবজি চাষীর মুখে হাসি ফুটিয়েছ।
ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষেতে গিয়ে প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে বাজারদরে সরাসরি সবজি কেনার কারণে করোনাকালে সবজি বাজারে পাঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা কৃষকরা ক্ষেতেই তাদের সবজি ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারছেন। নির্ঝঞ্ঝাটে লাভের মুখ দেখছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ ওয়াহেদ জানান, হাটহাজারীতে গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে কাঁকরোল, ঢেঢস, ঝিঙা, চিচিঙা, লাউ, বেগুন, কচু, মরিচসহ নানা ধরণের সবজি চাষ করেন প্রায় ৫ হাজার চাষী। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ হাটহাজারীর বড় বড় মাদরাসার চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি শহরেও যায়। তবে এইবার করোনার কারণে সব বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন সবজি চাষীরা। মাঠেই সবজি নষ্টের দুঃস্বপ্ন নিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে ছিলেন তারা।
‘এই সময়ে প্রান্তিক সবজি চাষীদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন ইউএনও স্যার। তার উদ্যোগে সরকারি ত্রাণের সঙ্গে সবজি কিনে তা দিনমজুরদের মাঝে বিতরণ করছেন চেয়ারম্যানরা। ফলে সবজি চাষীরা ন্যায্য মূল্য পেয়ে লাভের মুখ দেখছেন। বড় ধরণের ক্ষতির মুখ থেকে রক্ষা পেয়েছেন।’
ধলই ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষক প্রকাশ বড়ুয়া জানান, ক্ষেতভর্তি সবজি ফলিয়েও দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ইউএনও স্যার আমাদের বাঁচিয়েছেন। তার কারণে পরিবহন এবং শ্রমিক মজুরি ছাড়া ক্ষেতে বসেই ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করতে পারছি।
হাটহাজারীর গুমান মর্দন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ইউএনও স্যারের নির্দেশে ক্ষেতে গিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বাজার দরে সবজি কিনে সরকারি চাল সহায়তার সঙ্গে তা কর্মহীনদের মাঝে বিতরণ করছি আমরা।
গুমান মর্দন ইউনিয়নে প্রথম দফায় ৭২ জন এবং দ্বিতীয় দফায় ৭৫ জন কর্মহীন দিনমজুরদের মাঝে সরকারি চাল সহায়তার সঙ্গে কচু, কচুর লতিসহ নানা ধরণের সবজি বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
ইউএনও মো. রুহুল আমিন জানান, কর্মহীন দিনমজুরদের জন্য চাল সহায়তার পাশাপাশি নগদ সহায়তা দেয় সরকার। যা দিয়ে ডাল, পেঁয়াজ, তেল কিনে দিতাম আমরা। তবে প্রান্তিক কৃষকদের বাঁচাতে গত সপ্তাহে ডাল, তেলের পরিবর্তে সবজি বিতরণের সিদ্ধান্ত নিই আমরা।
তিনি বলেন, করোনার ৮ম ও ৯ম বরাদ্দে হাটহাজারী উপজেলার জন্য চালের সঙ্গে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা নগদ সহায়তা পেয়েছি আমরা। এসবের পুরোটা দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ এলাকার চাষীদের কাছ থেকে সবজি কিনেছেন। অনাহারে থাকা মানুষের মাঝে বিলি করেছেন।
‘করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে এখন থেকেই ভাবতে হবে। এ জন্য সবার আগে কৃষক বাঁচাতে হবে। কৃষক যদি ফসল ফলিয়ে ন্যায্য দাম পায়, তবে দেশে একজনও অনাহারে থাকবে না।’ যোগ করেন এই ইউএনও।