কনটেইনার ও জাহাজজট কমাতে উদ্যোগের সুফল

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের কনটেইনার ও জাহাজজট কমাতে নানা উদ্যোগের সাময়িক সুফল মিলছে। ক্রমে বাড়ছে কনটেইনার ডেলিভারি।

বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ৪৮ ঘণ্টায় বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ৮ হাজার ৬৮২ টিইইউ’স (২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার)। ডেলিভারি বাড়ায় বন্দর এলাকায় কনটেইনারবাহী প্রাইম মুভার, ট্রেইলার, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক চলাচলও বেড়েছে।

বন্দরের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৪৯ হাজার ১৮ কনটেইনার ধারণক্ষমতার বন্দরে বর্তমানে রয়েছে ৪৫ হাজার ২৬৫ টিইইউ’স। বুধবার (২৯ এপ্রিল) সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে ৪ হাজার ৪৪০ টিইইউ’স।

বৃহস্পতিবার এ সংখ্যা ছিলো ৪ হাজার ২৪২ টিইইউ’স। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ডেলিভারির সংখ্যা নেমে এসেছিল ৫০০-৭০০ কনটেইনারে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, প্রায় সব ধরনের আমদানিপণ্য স্ক্যানিং করে ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে (অফডক) নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি বেড়েছে। প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি কনটেইনার অফডকে যাচ্ছে।

আগে ৩৮ ধরনের পণ্যই শুধু অফডকে নেওয়া হতো। পাশাপাশি সীমিত আকারে তৈরি পোশাক কারখানা চালু করায় কাঁচামালের চাহিদা বেড়েছে, এতেও বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস বেড়েছে। আবার রমজানের অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য ছোলা, রসুন, আদা, ফল ইত্যাদির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের পণ্যভর্তি কনটেইনার ডেলিভারি বেশি হচ্ছে।

এর বাইরে বন্দর কর্তৃপক্ষে করোনাকালে আমদানি করা পণ্যভর্তি কনটেইনার ৫ মে’র মধ্যে খালাসে স্টোর রেন্ট (ভাড়া) শতভাগ ছাড় দেওয়ায় অনেক আমদানিকারক এ সুযোগ নিচ্ছে। সব মিলে পণ্যখালাসের ধুম পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আমদানি পণ্যভর্তি ২ হাজার ৫৭০ বক্সে ৩ হাজার ৯৩৫ টিইইউ’স কনটেইনার জাহাজ থেকে জেটি বা টার্মিনালে নামানো হয়েছে। রফতানি পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার মিলে জাহাজে তোলা হয়েছে ২ হাজার ৯৩৯ কনটেইনার।

মোট হ্যান্ডলিং হয়েছে ৬ হাজার ৮৭৪ টিইইউ’স। এ সময় ট্রেনে ঢাকা কমলাপুর আইসিডিতে গেছে ৬৯ কনটেইনার, এসেছে ৬১ কনটেইনার।

২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন ডিপোতে আমদানি পণ্যভর্তি ১ হাজার ১৫৯ বক্সে ১ হাজার ৮০০ টিইইউ’স পাঠানো হয়েছে। খালি কনটেইনার পাঠানো হয় ১৮২ টিইইউ’স। অনচেসিস ডেলিভারি হয়েছে ৬৮৮ টিইইউ’স। ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি হয়েছে ১ হাজার ৭৭৪ টিইইউ’স।

বন্দর থেকে মোট বের হয়েছে ৫ হাজার ৬ বক্সে ৭ হাজার ৩৭৮ টিইইউ’স। বন্দরে মূলত ২ ধরনের কনটেইনার (বক্স) আসে। একটি ৪০ ফুট, অপরটি ২০ ফুট। হিসাবের সুবিধার্থে ৪০ ফুটের একটি বক্সকে ২ ইউনিট (টিইইউ’স) হিসাব করা হয়।

বন্দরের জিসিবি, এনসিটি, সিসিটিতে মোট ১২টি কনটেইনার জাহাজে হ্যান্ডলিং হচ্ছে। এর বাইরে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ আছে আরও ২৮টি কনটেইনার জাহাজ। জেটিতে কনটেইনার জটের কারণে ধীরগতিতে হ্যান্ডলিং হওয়ায় এসব জাহাজকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

এর বাইরে বহির্নোঙরে সাধারণ পণ্যবাহী ৮টি, খাদ্যশস্যের ৬টি, সিমেন্ট ক্লিংকারের ১৮টি, তেলবাহী ৩টি জাহাজে লাইটারিং বা ছোট জাহাজে পণ্য খালাস হচ্ছে। বন্দরে মোট জাহাজ আছে ১০৪টি।

বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নানা উদ্যোগ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় কনটেইনার ডেলিভারি ক্রমে বাড়ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কনটেইনার ডেলিভারি নিলে আমদানিকারকরা শতভাগ স্টোর রেন্ট ছাড় পাবেন।