‘এক দফা এক দাবি, চাই না কোনো রাজনীতি’ স্লোগানে উত্তাল জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারবহির্ভূত এমন হত্যাকাণ্ড কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে পিটিয়ে হত্যার পর থেকে মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ ঝাড়েন অনেকে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটি রেজিস্টার সুদীপ্ত শাহিন বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২২-২৫ জনে বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং হাবিবুল্লাহ নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ফটোগ্রাফিক এভিড্যান্স ও অন্যান্য এভিড্যান্সের ভিত্তিতে আমরা একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এরমধ্যে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এমন কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি।

এমন ঘটনাকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা। গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন তারা।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, তিনি যদি পূর্বে কোনো অপরাধ করে থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রে আইন আছে, সেটা আইন দেখবে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড শিক্ষার্থীরা সমর্থন করে না।

আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় ও লেজুড়বৃত্তি সব ধরনের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ (জাকসু) চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিকাল ৩টায় শহীদ মিনার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নেন।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘এক দফা এক দাবি চাই না কোনো রাজনীতি’, ‘ডান-বামের রাজনীতি, চাই না তোদের উপস্থিতি’, ‘রাজনীতির অংশীদার এই মুহূর্তে ক্যাম্পাস ছাড়’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ সময় তারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুসা ভূঁইয়া বলেন, “সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে যে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি এবং শিক্ষক রাজনীতি সেগুলোর ফলাফল কখনোই সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক ছিল না। বরং এসবের প্রভাব সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে পড়েছে। তাই আমরা চাই কোনোরকম টালবাহানা না করে, ‘অনির্দিষ্টকাল’, ‘সাময়িক সময়’ এ ধরনের শব্দের মারপ্যাঁচ যেন না খেলে।”

তিনি বলেন, “আগামী রোববারের মধ্যে জাবিতে আজীবনের জন্য ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে আমাদের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর দাবি।”

উল্লেখ্য, বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকায় মারধরের শিকার হন শামীম আহমেদ মোল্লা। রাতে তাকে ক্যাম্পাসের কোনো এক ভবনে নিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। পরে শামীমকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গুরুতর অবস্থায় আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।