অরুণাচল বসু ছিলেন কবি, অনুবাদক ও সংগঠক। তাঁর জন্ম ১৯২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর যশোরের ডোঙ্গাঘাটা গ্রামে।
শৈশবে তিনি পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকায় দারুণ দক্ষ ছিলেন। বেলেঘাটার দেশবন্ধু হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বন্ধুত্ব হয়েছিল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে। এর পর থেকেই দুজনে একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠেন। কিশোর বয়সে সুকান্তের প্রভাবে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। রাজনীতির কারণে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। জীবন চালানোর প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়েছিল তাঁকে। তিনি পার্টির পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’য় প্রুফ রিডারের চাকরি করেছিলেন। এরপর ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকা ফেরি করে বিক্রি করেছেন। একসময় লন্ড্রি ব্যবসাও করেছেন। তবে তিনি কখনো রাজনৈতিক আদর্শ এবং কবিসত্তাকে বিসর্জন দেননি।
একসময় প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে আসেন। তাঁর জীবৎকালে ‘পলাশের কাল’ ও ‘দূরান্ত রাধা’ নামের মাত্র দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর প্রবন্ধের বই ‘কবি কিশোর সুকান্ত’, ‘সুকান্ত: জীবন ও কাব্য’ প্রভৃতি।
তিনি অনুবাদক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। অধিকাংশই রাশিয়ান কবিতার অনুবাদ করেছেন। এর বাইরে অন্য ভাষার কবিতাও অনুবাদ করেছেন। তাঁর কাব্যচর্চার ফসল বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং পাণ্ডুলিপিতে ছড়িয়ে রয়েছে। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকার জন্য প্রচ্ছদ এবং প্রচুর ছবি এঁকেছেন। মৃত্যুর প্রায় ২৭ বছর পরে তাঁর রচিত কবিতা, গান ও অনুবাদ নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল ‘অরুণাচল বসুর সংকলিত কবিতা’ নামে।
তিনি একজন সংগ্রাহকও ছিলেন। বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং দেশ-বিদেশের বেশ কিছু আঁকা ছবির কপি তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর জীবনের অন্যতম কৃতিত্ব হলো ‘নতুন সংস্কৃতি’ নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা। এক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি এই সংগঠনটি গড়ে তুলেছিলেন।
অরুণাচল বসু ১৯৭৫ সালের ২৪ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।