হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম চলছে

হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম চলছে ভারী বর্ষন ও বজ্রপাত হলে মা মাছ ডিম ছাড়ার আশা করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা
শফিউল আলম, রাউজান ঃপ্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে বেড়েছে মাছের আনা গোনা প্রবল বর্ষন ও বজ্রপাত হলে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার সম্ভবনা । প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম চলছে । প্রতি বৎসর চৈত্র মাস থেকে শ্রাবন মাস পর্যন্ত সমযে হালদা নদীতে মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। মা মাছ ডিম ছাড়ার পর রাউজান – হাটহাজারী হালদা নদীর তীরবতৃী এলাকায বসবাস কারী জেলে ও ডিম সংগ্রহকারীরা হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রবল বর্ষন ও বজ্রপাতকে উপেক্ষা করে নৌকা ওজাল নিয়ে নদীতে নামেন । নদী থেকে ডিমসংগ্রহ করে হ্যাচারী ও নদীর তীরে খনন করা মাটির কুয়ার ডিম রেখে ডিম থেকে রেনু উৎপাদন করেন । হালদা নদীর মা মাছের ডিম থেকে ফুটানো রেনু দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষী, মৎস প্রকল্পের মালিকরা ও হ্যচারীর মালিকরা এসে রেনু ক্রয় করে নিয়ে পুকুর জলাশয়, মৎস প্রকল্পে মাছ চাষ করেন । প্রতি বৎসর হালদা নদীর মা মাছের ডিম থেকে ফুটানো রেনু নিয়ে মাছ চাষ করে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন করেন মাছ চাষী, মৎস প্রকল্পের মালিকরা। হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম শুরু হলে ও বৃষ্টি ও বজ্রপাত না হওয়ায হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়েনি । হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়লে রাউজান হাটাহাজারীর ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা ও জাল নিয়ে প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন কবে ডিম ছাড়বে । নদীর তীরে মাটি খনন করে মাটির কুয়া তৈয়ারী করছে ডিম সংগ্রহকারীরা । হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পর ডিম সংগ্রহকারীরা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে মৎস মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে রাউজানের পশ্চিম গহিরা, কাগতিয়া, গহিরা মোবারক খীল, হাটহাজারীর মাছুয়া ঘোনা, মদুনাঘাট, শাহমাদারী এলাকায় ৬টি হ্যচারী নির্মান করা হয় । ৬টি হ্যচারীর মধ্যে হাটহাজারী উপজেলার তিনটি হ্যচ্যারী ও রাউজানের গহিরা মোবারক খীল হ্যচারী সচল থাকলেও রাউজানের পশ্চিম গহিরা ও কাগতিয়া দুটি হ্যাচারী ব্যবহারের অনপযোগী হয়ে পড়ে গত ৫ বৎসর ধরে। অকোজো হয়ে যাওয়া হ্যচারী সচল করার কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ । রাউজানের পশ্চিম বিনাজুরী এলাকায় আই ,ডি,এফ একটি হ্যচারী নির্মান করে হ্যচারীটি সচল রেখেছেন । হালদা নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা পশ্চিম গহিরা বড়ুয়া পাড়া, দক্ষিন গহিরা, সোনাইর মুখ, পশ্চিম বিনাজুরী, গোলজার পাড়া, কাসেম নগর, আজিমের ঘাট, মগদাই, পশ্চিম আবুরখীল, নাপিতের ঘাট, খলিফার ঘোনা, উরকিরচর, মাইশকরম, সার্কদা,মোকামী পাড়া, কচুখাইন, হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, নয়াহাট, আমতোয়া,মাছুয়া ঘোনা, বাড়ীঘোনা, মাদ্রাসা, দক্ষিন মাদ্রৃাসা এরাকায় নদীর তীরে মাটি খনন করে মাটির কুয়া তৈয়ারী করে রেখেছে ডিম সংগ্রহকারীরা। প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের যে কোনো পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কয়েকদিন আগে-পরে জোয়ার ও ভাটার সময় কার্প জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউস) মা মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। ভারি বর্ষন হলে বজ্রপাত হলে নদীতে পাহাড়ী ঢলের ম্রোতের পানি নেমে আসলে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। আগামী পুর্ণিমার জো”তে ভারী বর্ষন হলে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে আশা করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।

হালদা নদীর মা মাছের প্রজনন রক্ষায় হালদা নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচল নিষেধ করা হয়েছে । নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হালদা নদীর মোহনা কালুরঘাট থেকে নগরীর মোহরা,রাউজানের কচুখাইন, মোকামী পাড়া, সার্কদা এলাকায় হালদার চর ও ছায়ার চর এলাকায় ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌযানে পাওয়ার পাম্প বসিয়ে বালু উত্তোলন ও চর থেকে মাটি কেটে ড্রেজার ও যান্ত্রিক নৌযানে করে নদী দিয়ে পরিবহন করে হালদা পাড়ের ইট ভাটায় ও রাউজান হাটহাজারী নগরীর মোহরা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত । এছাড়া ও হালদা নদীতে বিভিন্ন স্থানে জাল ও বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করছে গোপনে কতিপয় অসাধু ব্যক্তিরা। হালদা নদীতে নৌপুলিশ, রাউজান হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে মাছ ধরার জাল উদ্বার করা হলে ও মাছ শিকার বন্দ্ব হয়নি । গড়দুযারা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আলী আহম্মদ বলেন, হালদা নদীতে মা মাছের আনা গোনা বেড়েছে । ভারী বর্ষন ও বজ্রপাত হলে নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। ডিম সংগ্রহ করে ডিম ফুটানোর জন্য নদীর তীরে মাটির কুয়া খনন করে রেখেছি । রাউজান উপজেলা মৎস সম্প্রসারন কর্মকর্তা আবদুল্ল্রাহ আল মামুন বলেন, হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে । হাটহাজারী তিনটি হ্যাচারী সহ রাউজানের গহিরা মোবারক খীল হ্যচারী সচল রয়েছে । রাউজানের পশ্চিম গহিরা ও কাগতিয়া অকোজা হয়ে পড়ে থাকা দুৃটি হ্যচারী পুনঃ নির্মানের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে । আগামী এক বৎসরের মধ্যে দুটি অকোজো হয়ে পড়া হ্যচারী পুনঃ নির্মান করার কাজ এগিয়ে চলছে ।

এদিকে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়বে এমন আশায় হালদার পাড়ে নির্ঘুম রাত কাঠাচ্ছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। নৌকা আর বাঁশের ভেলার ওপর দাঁড়িয়ে জাল ফেলে ডিমের অপেক্ষায় রয়েছেন শত শত ডিম সংগ্রহকারীরা।
এর মধ্যে বজ্রপাতসহ মুষলধারে বৃষ্টি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা করছে ডিম সংগ্রহকারীরা। এখন কেবল অপেক্ষা লাগাতার বজ্রসহ বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের।

হালদা গবেষক চট্টগ্রাম ক্যন্টেনমেন্ট পাবলিক কলেজের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন চলতি প্রজনন মৌসুমে নদীর পরিবেশের স্থিতিশীলতা ও প্রাকৃৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বর্তমান পরিস্থিতির মতো বজায় থাকলে হালদায় কার্পজাতীয় অর্থাৎ রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউস মা মাছের ডিম ছাড়ার নজির তৈরি হতে পারে।