মাইজভাণ্ডারীর দরবার শরীফের প্রধান দিবস ১০ই মাঘ

শওকত হোসেন করিম ,ফটিকছড়ি:
আগামী বোধবার (২৪ জানুয়ারি) গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (কঃ)’র ১১৮ তম ওরশ শরীফ মহাসমারোহে ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ অনুষ্ঠিত হবে।
ওরশ উপলক্ষে বিভিন্ন মনজিল ব্যপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষেও নেওয়া হয়েছে ব্যপক প্রস্তুতি।
ওরশ শরীফে প্রশাসনের হিসাবে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতে পারে। তবে আশেক ভক্ত ও বিভিন্ন মনজিলের হিসাব মতে ১০ মাঘ ওরশ শরীফ এক সপ্তাহ ধরে আশকে ভক্ত আসা যাওয়া করে। সব মিলিয়ে প্রায় ২২ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে।
রওজা শরিফ গোসল ও গিলাফ চড়ানোর মাধ্যমে উরস্ শরিফের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
২৪ জানুয়ারী বুধবার প্রদান দিবসের দিন স্ব স্ব মনজিলে কেন্দ্রিয় মিলাদ মাহ্ফিল ও আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে ।আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন স্ব স্ব মনজিলের প্রধানগণ।
প্রধান দিবসের দিন ছাড়াও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন মনজিল ব্যপক কর্মসূচী পালন করে আসছে।
ওরশ শরীফ উদযাপন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের সাথে আহমদিয়া মনজিল ও গাউছিয়া হক মনজিলের প্রশাসনিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উরস শরিফ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা, দেশ-বিদেশ হতে আগত আশেক-ভক্ত ও জায়েরীনদের সুবিধার্থে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা,বিভিন্ন হোটেল খাবারের দাম নিয়ন্ত্রন ও আইন শৃংখলা রক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট, পর্যাপ্ত পুলিশ,আনসার মোতায়েনসহ মন্জিলের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,ওরশ উপলক্ষে স্পেশাল এক্সিকিউটিব ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ফোর্স, ১০৫ সদস্য বিশিষ্ট পুরুষ মহিলা আনসার টিম আইনশৃংঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বে থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন মনজিলের সমন্বয়ে আগত আশেক ভক্তের সুবিধার্থে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
মহান ১০ই মাঘ উরস শরিফ উপলক্ষে গাউসিয়া হক মন্জিল প্রতিষ্ঠিত শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট-এর ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ-এর শাখা কমিটির উদ্যোগে স্ব স্ব এলাকার জামে মসজিদে খতমে কোরআন এবং মিলাদ মাহফিল আয়োজন, ১০ মাঘ ২৪ জানুয়ারি বুধবার উরসের দিন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, ইসলামের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্বলিত দুর্লভ চিত্র প্রদর্শনী, উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা সম্বলিত প্রচার, ন্যায্যমূল্যে খাবারের দোকান, বিশুদ্ধ পানীয় জল, ওযু এবং অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় প্রধান সড়ক হতে হযরত সাহেব কেবলার পুকুর পাড় পর্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি, ৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু হলে ১০ম আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মিলন, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার নগরের নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ষোড়শ শিশু-কিশোর সমাবেশ উপলক্ষে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার নগরের ষোলশহরস্থ এলজিইডি মিলনায়তনে ১০ম উলামা সমাবেশ, ১৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন মহিলাদের আত্মজিজ্ঞাসা ও জ্ঞানানুশীলনমূলক সংগঠন ‘দি মেসেজ’র উদ্যোগে বিশেষ মহিলা মাহফিল, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার নগরের নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ষোড়শ শিশু-কিশোর সমাবেশ ও পুরস্কার বিতরণী, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু হলে ১০ম শিক্ষক সমাবেশ, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার ট্রাস্ট নিয়ন্ত্রণাধীন মহিলাদের আত্মজিজ্ঞাসা ও জ্ঞানানুশীলনমূলক সংগঠন ‘আলোর পথে’র উদ্যোগে বিশেষ মহিলা মাহফিল, ২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) বৃত্তি তহবিল এর ২০২৩ পর্বের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান।
এদিকে ওরশ শরীফে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশেক ভক্ত আসতে শুরু করেছে। ঢোল বাদ্য সহকার গরু ছাগল মহিষসহ বিভিন্ন হাদিয়া নিয়ে দরবারে আসছেন।
রওজায় রওজায় চলছে আশেক ভক্তের ইবাদত বন্দেগী,জিকির আজগার,মিলাদ মাহফিল ও জিয়ারত।
ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঢোল বাদ্য বাজনা ও মাইজভাণ্ডারী কালাম পরিবেশন। এক কথায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ। এছাড়া ওরশ শরীফ কেন্দ্র করে বসেছে গ্রামীণ লোকজ মেলা।
মেলায় পোষাক,রকমারী খাবার গৃহস্থালি প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দা ছুরি বটি,বেত সামগ্রী, বেড়া, চাটাই, মাছধরার ফাঁদ, হাতপাখা, মোড়া, ফুলদানি,হাঁড়ি পাতিলসহ ঘরে ব্যবহারের ব্যবহারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায়। তাই মাঘের মেলার জন্য ঘরের বউ ঝিঁয়েরাও অপেক্ষয় থাকে।
স্থাণীয়দের পাশাপাশি উপজাতীরাও এ মেলায় ছুটে আসে।
এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ বড় বড় সাইজের জাপনী মুলা বিক্রি যা ভাণ্ডারী মূলা নামে খ্যাত। মেলার বিভিন্ন স্থানে জমজমাট মূলা বিক্রির দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।