রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে । তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টি কারণে বায়ুমান অনেকটা সহনীয় ছিল। সেই সুবাদে ঢাকার বাতাস তুলনামূলক ভালো থাকলেও আজ ভোর থেকে আবারও দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। এ সময় ঢাকার স্কোর ১৩৬।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) বায়ুদূষণে বিশ্বের ১০৯টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান আজ ১৫তম স্থানে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঢাকায় বায়ুদূষণ শীর্ষে থাকলেও বৃষ্টি হওয়াতে মাঝে দূষণের মাত্রা কমে আসে। আবার বৃষ্টি কমে যাওয়ায় চলতি সপ্তাহ থেকে বাড়তে শুরু করে দূষণের মাত্রা। আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর রয়েছে ৩২৮ স্কোর নিয়ে।
আজ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। শহরটির স্কোর হলো ২১৮ অর্থাৎ সেখানকার বায়ুর মানও খুবই অস্বাস্থ্যকর। সূচকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীনের চ্যাংডু এবং শহরটির স্কোর হচ্ছে ১৮১। এর অর্থ দাঁড়ায় সেখানকার বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের প্রকাশিত বাতাসের মানসূচকে (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই) দেখা যায়, এ সময় ঢাকার স্কোর ১০৫। বাংলাদেশ স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ০০ মিনিটে ঢাকার বায়ুমানের স্কোর ছিল এটি (১০৫)। বাতাসের এ মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত হলে তাকে ‘ভালো’ বলা হয়।
এদিকে জলবায়ু বিপর্যয়ে বিশ্বের বড় বড় শহর ছাড়াও ছোট ছোট শহরেও প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে বায়ু দূষণ। নানাবিধ কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে আর তাই বিশ্বে বাড়ছে সব ধরনের দূষণ। কোনোমতেই কমানো যাচ্ছে না বায়ুদূষণ।
চলতি মাসের ৭ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সেমিনার অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপ্টেশন, অ্যাগ্রিকালচারাল ইনোভেশন অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক এ সেমিনারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন চিন্তাবিদ এবং ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিকসের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, বিশ্বে পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মত দেশগুলো।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মানব সম্প্রদায় নরকের দরজা খুলে দিয়েছে, যা বিশ্বকে জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করছে-জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এ উদ্ধৃতির প্রসঙ্গ টেনে ড. খলীকুজ্জমান আরও বলেন, দূষণের কারণে বিশ্ব আজ জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে বাড়ছে বায়ুদূষণ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার এ তালিকা প্রকাশ করে থাকে প্রতিনিয়ত।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।
২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এদিকে ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সাধারণত একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের পাঁচটি ধরনকে ভিত্তি করে; যেমন: বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)।
ঢাকায় গত জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের মধ্যে কাটিয়েছে নগরবাসী। জানুয়ারির মোট ৯ দিন রাজধানীর বাতাসের মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে উঠে আসে আইকিউ এয়ারের তালিকাতে।
বায়ুদূষণ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে। এটা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর।