অপহরণের ১৪ দিন পর অপহৃত শিক্ষার্থী হৃদয়ের কংকাল উদ্ধার

অপহরনের ১৪দিন পর অপহৃত শিক্ষার্থী হৃদয়ের কংকাল উদ্বার প্রধান আসামীকে পুলিশের গাড়ী থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলেছে জনতা

শফিউল আলম, রাউজান প্রতিনিধি: অপহরণকারীদের ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও অপহরন ঘটনার ১৪দিন পর গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর ভোরে অপহরন কারী চক্রের মুল হোতা উমংচিং মারমা (২৬) কে পুলিশ গ্রেফতার করে তার দেওয়া তথ্যমতে রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের আশরফ শাহ মাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দুরেরাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার গহিন অরণ্যে অপহৃত শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক হৃদয়ের লাশের কংকাল ও তার পরনের কাপড় উদ্বার করে পুলিশ । শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক হৃদয়ের লাশের কংকাল উদ্বার করে পুলিশ অপহরনের সাথে জড়িত প্রধান আসামী উমংচিং মারমা (২৬) কে নিয়ে আসার সময়ে প্রথমে গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১১ টার সময়ে কদলপুর আশরফ শাহ মাজারের সামনে জনতা পুলিশের গাড়ী আটক করে পুলিশের গাড়ী থেকে আসামীকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। রাউজান থানার ওসি আবদুল্ল্রাহ আল হারুন, রাউজান থানার ওসি তদন্ত ছিদ্দিকুর রহমান, রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার অজয় দেব শীলের নেতৃত্বে ২০জন পুলিশে আশরফ ,শাহ মাজার থেকে প্রধান আসামীকে নিয়ে আসার পথে হজরত আশরফ শাহ সড়কের মোল্লা পাড়া এলাকায় আসলে সড়কে ব্যরিকেট দিয়ে পুলিশের গাড়ী আটক করে কয়েক শতাধিক মহিলা পুলিশের গাড়ী আটক করে। মহিলাদের সাথে কয়েক শত পুরুষ ও যোগ দেয় । উত্তোজিত জনতা পুলিশের গাড়ী থেকে প্রধান আসামী উমংচিং মারমা (২৬)কে নামিয়ে দিতে পুলিশের কাছে দাবী জানায় । পুলিশ তাদের গাড়ী থেকে আসামী নামিয়ে দেয়নি । উত্তোজিত জনতা হাতে লাঠি নিয়ে পুলিশের গাড়ীর উপর চড়াও হয় । পুলিশের গাড়ীর দরজার গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে । পুলিশের গাড়ীতে বসিয়ে রাখা মাথার হেলমেট শরীরে বুলেটপ্রুপ জ্যাকেট পড়ানো আসামী উমংচিং মারমা (২৬) কে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে জনতা গণপিটুনি দেয় । জনতার গণপিটুনিতে প্রধান আসামী উমংচিং মারমার মৃত্যু হয় । এই ঘটনার সময়ে পুলিশের সাথে উতোজিত জনতার ধাওয়া পাল্টার ঘটনা ঘটে । ধাওয়া প্লাটা চলাকালে পুলিশের কয়েক সদস্য আহত হয় । ঘটনার পর চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেন, আসাদুজ্জমান রাউজান রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় । রাউজান থানার ওসি আবদুল্ল্রাহ আল হারুন বলেন, শিবলী সাদিক হৃদয়ের অপহরন ঘটনার পর পুলিশ পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাপমারা গ্রামের উহ্লাপ্রুমং মারমার পুত্র আছুমং মারমা(২৬) ও একই জেলার কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আমতলী পাড়া গ্রামের উষাচিং মারমার পুত্র উক্যথোয়াই মারমা (১৯) কে গ্রেফতার করেন। ঘটনার সাথে জড়িত দু আসামীর দেয়া তথ্যমতে ঘটনার মুল হোতা উমংচিং মারমা (২৬)কে কে পুলিশ গ্রেফতার করা হয় । অপহরন ঘটনার মুল হোতা উমংচিং মারমার দেওয়া তথ্যমতে রাউজানের কদলপুর প্াহাড়ী এলাকা থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার গহিন অরণ্যে থেকে শিবলী সাদিকের লাশের কংকাল হাড়গোড় ও কাপড় উদ্বার করা হয় । পুলিশ কংকাল উদ্বার করার পর গাড়ী নিয়ে আসার পথে কদলপুর আশরফ শাহ সড়ক দিয়ে আসার পথে কদলপুর মোল্লাপাড়া এলাকায় আসলে উত্তোজিত জনতা পুলিশের গাড়ী আটক করে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে গাড়ী ভাংচুর করে গাড়ী থেকে আসামী ছিনিয়ে নেয় । এসময়ে পুলিশের সাথে জনতার সংর্ঘষ হয় । সংর্ঘর্ষে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয় । পুলিশের গাড়ী থেকে আসামীকে নামিয়ে জনতা গণপিটুনি দেয় । জনতার গণপিটুনিতে অপহরন ঘটনার মুল হোতা উমংচিং মারমার মৃত্যু হয় । এই ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তোজনা চলছে । ঘটনার পর পর পুলিশের গাড়ীতে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় । গত ২৮ আগষ্ট রাতে শিবলী সাদিক হৃদয় (২০ কে রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পাহাড়ী এলাকার একটি মুরগী খামার থেকে অপহরণ করেন উপজাতীয় কয়েকজন সন্ত্রাসী। অপহৃত কলেজ শিক্ষার্থী হৃদয় উপজেলার ৮নম্বর কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়ার গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো: শফিক ড্রাইভারের ছেলে হৃদয় কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেই পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় চেয়ারম্যান নেজাম উদ্দিন চৌধুরীসহ চারজনের মালিকানাধী একটি মুরগীর খামারে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হৃদয় যে মুরগীর খামারে চাকরি করতেন সেখানে কয়েকজন উপজাতি চাকমা যুবকও চাকরি করতেন। এসব চাকমা যুবকদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেখানে গত ২ মাস আগে চাকরি করা চাকমা যুবকদের সাথে তার বিবাদ সৃষ্টি হয়। পরে মুরগী খামারের মালিকেরা তাদের মিলমিশে করে দেন। গত কিছুদিন আগেও চাকরি করা সেই চাকমা যুবকদের হৃদয় তাদের বাড়িতে আপ্যায়ন করে ছিলেন। এরপর তিনি বুঝতে পারেনি তাকে এই উপজাতীরা অপহরণ করবেন। হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়া নামক স্থানে গিয়ে ২জন লোকের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। টাকা দেওয়ার পর টাকা হাতে নিয়ে মানুষ গুলো জানান তোর ছেলে সামনে সিএনজিতে আছে। সেই ছেলেকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে না পেয়ে আবারও সেই স্থানে গিয়ে দেখেন মানুষ গুলো আর নেই। পরে বাড়িতে চলে আসে। সন্তান হারানোর প্রায় ১৪ দিন পর গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে কাউখালী উপজেলার গহিন অরণ্যে শিক্ষার্থী শিবলী সাদিকের পরণের কাপড় ও লাশের কংকাল উদ্বার করেন পুলিশ । গত দুযুগ পুর্বে থেকে রাউজানের পাহাড়ী এলাকা ও সীমান্তবর্তী কাউখালী উপজেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছে রাউজানের অনেক যুবক, ব্যবসায়ী। রাউজানের পুর্ব গুজরা ইউনিয়নের বড়ঠাকুর পাড়ার যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও মানিক । তারা দুজনকে তাদের বাড়ী থেকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে কাউখালী উপজেলার দুর্গম পাহাড়ী এলা কায় নির্মমভাবে হত্যা করে তাদেল লাশ পাহাড়ী এলাকায় ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা । পাহাড়ী এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর আলম, মানিকের লাশ উদ্বার করে পুলিশ । রাউজানের পুর্ব গুজরা ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দ্বা যুবলীগ নেতা আবু তালেবকে অপহরন করে নিয়ে সন্ত্রাসীরা রাউজানের কদলপুর পাহাড়ী এলাকার পুর্বে কাউখালী উপজেলার গহিন অরণ্যে হত্যা করে তার লাশ ফেলে দেয় । অপহরনের ঘটনার ১মাস পর কাউখালী উপজেলার গহিন অরণ্যে থেকে আবু তালেবের গলিত লাশ উদ্বার করে পুলিশ । রাউজানের কদলপুর এলাকার বাসিন্দ্বা আকতার হোসেন ও খেরশেদুল আলম বাইল্যাকে পাহড়ী এলাকায় খুন করেন সন্ত্রাসীরা । রাউজানের নাতোয়ান বাগিচা এলাকার সব্জি ব্যবসায়ী টুইন্যাকে পাহাড়ী এলাকায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। রাউজানের মোহাম্মদপুর নাথ পাড়ার বাসিন্দ্বা পুতুল নাথকে ও পাহাড়ী এলাকায় হত্যা করে সন্ত্রাসীরা । রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের আইলী খীল এলাকার এক বাসিন্দ্বা পাহাড়ী এলাকার খামার বাড়ীতে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা । রাউজান পৌরসভার বাইন্যা পুকুর এলাকার বাসিন্দ্বা পরিমলকে পাহাড়ী এলাকায় হত্যা করে সন্ত্রাসীরা । রাউজান সুলতানপুর এলাকার মুরগী ব্যবসায়ী লেদাইয়্যা পাহাড়ী এলাকায় মুরগী ক্রয় করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। রাউজানের হলদিয়্ াইউনিয়নের বৃকবানপুর এলাকার এক বাসিন্দ্বা পার্শ্ববর্তী কাউখালীর পোড়া বাজার এলাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্টান থেকে রাতে বাড়ী ফেরার পথে বানারস এলাকায় ঐ ব্যবসায়ীকে আটক করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। রাউজানের ডাবুয়া রাবার বাগানের তৎকালীন কর্মকর্তা আবদুল আউয়ালকে ডাবুয়া রাবার বাগান থেকে অপহরন করে নিয়ে যায় । একমাস গহিন অরণ্যে আটক রেখে মুক্পিণ আদায় করে মুক্তি দেয় । রাউজানের ডাবুয়া ইউনিয়নের কলমপতি কর্ণফুলী ফার্মসের কর্মচারী কামাল উদ্দিন ও আবদুল মালেককে অপহরন করে নিয়ে যায় পাহাড়ী সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা মুক্তিপণ নিয়ে তিনমাস পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয় । রাউজানের পাহাড়ী এলাকা ও সীমান্তবর্তী কাউখালী উপজেলা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা গুলো সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা হিসাবে গড়ে উঠেছে । রাউজানের সন্ত্রাসীরা ও পাহাড়ী উপজাতীয় সন্ত্রাসীগ্রুপ গুলো পাহাড়ী এলাকায় বিভিন্ন ছদ্দবেশ ধারন করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে ।