প্রধান বিচারপতি ও শেহবাজ শরীফের পাল্টাপাল্টি

পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মোড়নতুন মোড় নিয়েছে পাকিস্তানের রাজনীতি। মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে তোষাখানা মামলায় দেয়া শাস্তি স্থগিত করেছে। জামিনে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মুক্তি পাননি ইমরান খান। সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে আজ বুধবার শুনানি হবে। তারপর বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে, ইমরান অ্যাটক জেল থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে কিনা। ওদিকে তড়িঘড়ি করে পাস করা সুপ্রিম কোর্ট (প্রাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর) অ্যাক্ট ২০২৩’কে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে দেশের শীর্ষ আদালতের বিচার কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়। যদি তা-ই হয়, তাহলে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান নওয়াজ শরীফের দেশে ফিরে নির্বাচনে অংশ নেয়া বা সরকারি পদে বসা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। তার দল এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে মধ্য অক্টোবরে তিনি দেশে ফিরবেন। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট (প্রাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর) অ্যাক্ট ২০২৩ পাস করে সদ্য বিদায়ী সরকার।

তা আইনে পরিণত হয়েছে। এই আইনের অধীনে কোনো পার্লামেন্টারিয়ানের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার মেয়াদ ৫ বছরের বেশি করা যাবে না। সেই হিসেবে নওয়াজ শরীফের অযোগ্যতার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তাই তার দল স্বপ্ন দেখছে, তিনি দেশে ফিরে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি ওই আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করায় এই স্বপ্নের পরিণতি কি হয় তা বলা কঠিন। ওদিকে ইমরান খানের শাস্তিকে স্থগিত করার নিন্দা জানিয়েছেন সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি একে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দিলাওয়ার হুমায়ুন ওই রায় দিয়েছেন। শেহবাজ শরীফ অভিযোগ করেন, ‘পছন্দের’ ব্যক্তিকে রক্ষা করছেন কিনা একজন বিচারক, তা মনিটরিং করছেন প্রধান বিচারপতি। বিদায়ী শেহবাজ শরীফ সরকার ও প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বিরোধ বেশ কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে চলে আসে। সেনাবাহিনী ও সদ্য বিদায়ী সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তবু তিনি সাহস দেখাচ্ছেন। তাদের বিপরীতে গিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্ট (প্রাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর) অ্যাক্ট ২০২৩ আইনকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করছেন। বিজ্ঞজনরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবে প্রমাণ করেছেন। পাকিস্তানজুড়ে এ নিয়ে বিস্তার আলোচনা।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইমরান খানকে এক লাখ রুপির বিনিময়ে জামিন দেয়ার নির্দেশনা দেয়। এদিন তার আইনজীবী টিমের সদস্য ব্যারিস্টার গওহর বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার জামিন প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তারা আদালতের নির্দেশের কপি হাতে পাওয়ার পর জামিন আবেদন করবেন। এ রায়কে কেন্দ্র করে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন শেহবাজ শরীফ। তিনি একে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। তাদের পছন্দে ওই শাস্তি স্থগিত করা হয়েছে। তবে বাতিল করা হয়নি। এটা হবে বিচার বিভাগ নিয়ে উদ্বেগজনক একটি মুহূর্ত। শেহবাজ শরীফ বলেন, যখন উচ্চ বিচারিক পদ থেকে পরিষ্কার বার্তা পায়, তখন অধীনস্ত আদালত সেইমত কাজ করে।

এ সময় তিনি তার ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, নওয়াজ শরীফের শাস্তি যাতে নিশ্চিত করা যায়, তাই একজন মনিটরিং বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। আর এখন সেই মনিটরিং বিচারক হয়ে উঠেছে প্রধান বিচারপতি নিজে। এর মধ্য দিয়ে তিনি পছন্দের ব্যক্তিকে রক্ষা করতে চান। তিনি টুইটে আরও বলেন, বিচার বিভাগের ভূমিকা ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে লেখা থাকবে। তারা একদিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এমন বিচার ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য নয়। যারা ঘড়ি বিক্রি করেছে, তাদের ক্ষেত্রে আইন ছিল শক্তিহীন। যদি চোর এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে দেশের মানুষ কোথায় বিচার চাইবে?

অন্যদিকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের রায়কে সমালোচনা করে ধুয়ে দিয়েছেন সদ্য বিদায়ী জোট সরকারের অংশীদার আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) সিনিয়র নেতা জাহিদ খান। তিনি বলেছেন, ইসলামাবাদ হাইকোর্টের রায় বিচার বিভাগকে হত্যার সমতুল্য। তিনি প্রশ্ন রাখেন, কেন অন্য মামলা বা ঘটনাগুলোতে মানবতা জাগ্রত হয় না? তিনি বলেন, ইমরান খান রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করেছেন এবং তিনি যে চোর তার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ আছে। তারপরও তার প্রতি বিশেষ আচরণ দেখানো হচ্ছে। এ জন্য তিনি আদালতের সিদ্ধান্তকে ভুল বলে মন্তব্য করেন।

বিদায়ী সরকার ন্যাশনাল একাউন্টেবলিটি (এনএবি) অর্ডিন্যান্স সংশোধন করে যে আইন করেছে তা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে আবেদন করেন ইমরান খান। মঙ্গলবার সেই আবেদনের শুনানি করেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল। পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকার ১০ই এপ্রিল ওই আইনটি সংশোধন করে পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে উত্থাপন করে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)। কারণ, এই বিলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির সুয়োমোটো ক্ষমতাকে খর্ব করা হয়। এ জন্য বিলটি ফেরত পাঠিয়েছিলেন পিটিআইয়ের নেতা ও প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি।