মাহামুদুল হক হত্যা মামলায় ২ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

২২ বছর আগে লোহাগাড়া থানার মাহামুদুল হক হত্যা মামলায় ২ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ড. আবুল হাসানাতের আদালত এ রায় দেন।

আমৃত্যু  কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- লোহাগাড়া থানার আমিরাবাদ ইউনিয়নের রাজঘাটা এলাকার মৃত ইয়াকুব মিয্ঞার ছেলে শামসুল ইসলাম ও তার ভাই সৈয়দ আহম্মেদ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হলেন- একই এলাকার মৃত ইয়াকুম মিয্ঞার ছেলে আইয়ুব আলী, আইয়ুব আলীর ছেলে জহিরুল ইসলাম, মো. ইউসুফের ছেলে আজম বাদশা ও আলমগীর, বেলায়েত আলীর তিন ছেলে জসিম উদ্দীন আবুল কাশেম ও নাজিম উদ্দীন এবং একই থানার পদুয়া ইউনিয়নের নোয়াপাড়া এলাকার আব্দুল হাকীমের ছেলে নুরুল আলম।

খালাস পেয়েছেন কলিম উল্লাহর ছেলে আব্দুল মালেক।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী নাজিম উদ্দীন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩ নভেম্বর লোহাগাড়া থানার আমিরাবাদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড রাজঘাটা এলাকায় মাহামুদুল হককে মারধর ও দেশি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। ৫ নভেম্বর মাহামুদুল হক চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় মাহামুদুল হকের ভাই আলী আহমেদ বাদী হয়ে ১১ নভেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে লোহাগাড়া থানায় মামলা করে। পুলিশ তদন্ত শেষে ২০০২ সালের ২৮ জানুয়ারি আদালতে এজাহারভুক্ত ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০০৬ সালের ৮ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ। মামলায় বিচার চলাকালে দুইজন আসামির মৃত্যু হয়। মামলায় মোট ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালতে এ রায় দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী একেএম শাহরিয়ার রেজা রিয়াদ বলেন, সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত শামসুল ইসলাম ও তার ভাই সৈয়দ আহম্মেদকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও নুুরুল আলম,আইয়ুব আলী, জহিরুল ইসলাম, আজম বাদশা, আলমগীর,জসিম উদ্দীন,আবুল কাশেম ও নাজিম উদ্দীনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ের সময় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত  সৈয়দ আহম্মেদ ও যাবজ্জীন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আইয়ুব আলী, জহিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দীন ও আবুল কাশেম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রায়ের সময় আমৃত্যু কারাদণ্ড শামসুল ইসলাম ও যাবজ্জীন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আজম বাদশা, নুুরুল আলম, নাজিম উদ্দীন ও আলমগীর অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

আসামি পক্ষের আইনজীবী সেলিম উল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমার মক্কেল জহিরুল ইসলাম, আজম বাদশা, জসীম উদ্দীন ও আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন কোনোভাবেই মামলা প্রমাণ করতে পারেনি। মামলায় সাক্ষীরা আঘাতের ধরন একেক সময়, একেক ধরনের বলেছেন। কখনো কিরিচ আবার কখনো লোহার রড। সেখানে আসামিদের সাজা কীভাবে হয়? আদালত ডিফেন্সের মামলা আমলেই নেননি।  উচ্চআদালত বিচারিক আদালতের রায় বাতিল না করা পর্যন্ত এটাই ন্যায়বিচার। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো। নিশ্চয় উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাবো।

মামলার বাদীর ভাইপো মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও আমার চাচা হত্যার বিচার পেয়েছি। আমার চাচার হত্যার বিচার তদারকি করার কারণে আমার বাবাকেও তারা হত্যা করেছিল। আমার বাবার হত্যার বিচার ২০০৭ সালে পেয়েছি। আমার চাচা হত্যার রায়ে আমার পরিবার মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবুও খালাস পাওয়া আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।