কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনা

লালবাগের পোস্তায় কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনা শুরু করেছেন ব্যবসায়ী ও পোস্তার আড়তদাররা। ঈদের দিন দুপুর থেকে পোস্তায় আসতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কোরবানি দেওয়া পশুর চামড়া।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করে লালবাগের পোস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন। আড়তদাররা তাদের কাছ থেকে দুপুরের পর থেকেই চামড়া কেনা শুরু করেছেন, যা চলবে আগামী এক মাস।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বেলা ৩টার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির চামড়া আসতে থাকে। আড়তদারদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠেছে লালবাগের শায়েস্তা খান, রাজনারায়ণ ধর রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছেন। তবে পশু কোরবানি এখনো পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় পোস্তায় এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি কাঁচা চামড়ার বেচাকেনা। রাতের দিকে পুরোদমে চামড়া কেনাবেচা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পোস্তার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও বিকেল ৫টার পর থেকে চামড়া কেনাবেচা জমে ওঠে। গভীর রাত পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করা হবে। এখানে চামড়া সংগ্রহের পর প্রথমে লবণজাত করা হবে। পরে তারা সাভারের ট্যানারিগুলোতে পাঠিয়ে দেবেন।

তবে দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়তে গতবারের মতো এবারও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ হবে না বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা শহর ও এর আশেপাশের কোরবানির পশুর চামড়া পোস্তায় আসতে শুরু করেছে। দুপুর থেকেই আমরা কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করেছি। বিকেলের দিকে কেনাবেচা জমে উঠেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া যত তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে আনবেন তত ভালো। আমরা আগেও বলেছি চামড়া কেনার সময় যেন ভেবেচিন্তে কেনে। চামড়ার মান বুঝে আমরা দাম দেব।

তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে লবণযুক্ত চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ফুট হিসাবে ফড়িয়াদের কাছ থেকে কেনা হবে। এখন যেসব চামড়া আসছে সেটা লবণ ছাড়া, সেজন্য এ চামড়ার দাম প্রতিফুট লবণযুক্ত চামড়া থেকে ৫ থেকে ৭ টাকা কমে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। তবে শহরের চামড়া সন্ধ্যা ৬টা এবং শহরের বাইরের চামড়া যদি রাত ১০টার মধ্যে পোস্তায় আনা যায়, তাহলে পচন রোধ করা সম্ভব হবে। সেই সাথে দামও ভালো পাবে। যারা পারবে না তারা যে যেখানে রয়েছে, সেখানেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। নইলে গরমের কারণে চামড়া নষ্ট হতে পারে।

 

আফতাব খান আরও বলেন, ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতি বছর অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। বর্তমানে গরম অনেক বেশি, এ ছাড়া জ্যামের কারণে চামড়া নিয়ে আসতেও অনেক সময় লাগে। তাই পোস্তা এলাকায় সবাইকে চামড়া না এনে নিজ নিজ এলাকায় লবণজাত করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। এ বছর চামড়া ব্যবস্থাপনা আশা করছি ভালো হবে। সরকার এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সারা দেশে কম দামে চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। এমনকি ঢাকা শহরেও চামড়ার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি।

২০১৩ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গ ফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সারা দেশে খাসির চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। অন্যদিকে গত বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এ বছর কোরবানির পশুর লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে ৩ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। ঢাকার বাইরের চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর খাসি ও বকরির চামড়ার দাম গতবারের মতোই রাখা হয়েছে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। খাসি ও বকরির চামড়ার দাম গত বছরের মতোই রাখা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, এ বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা যদি দাম কমানোর জন্য গেম খেলে তাহলে আমরা চামড়া বিদেশে রপ্তানির অনুমতি দেব। আমরা চাই না সেটা হোক। এ বছরও আমাদের ঘোষণাটি হলো, কারসাজির মাধ্যমে দাম কম নেওয়া, দেওয়া বা চামড়া না নেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেব।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এই চামড়ার ৬০ ভাগের বেশি পাওয়া যায় কোরবানির মৌসুমে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।