সীমান্তপথে এসেছে ১০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ, দাম আরও কমেছে

ভারত থেকে প্রতিদিন পেঁয়াজ আমদানি বাড়ছে। গত ১০ দিনে দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৫৯ হাজার টন। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০০ কোটি টাকায় এই পেঁয়াজ আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আমদানি বাড়ায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দামও কমে এসেছে। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে এখন মানভেদে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানির শুরুতে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়। এ হিসাবে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ১৫ টাকা।

দেশের কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনায় গত মার্চের উৎপাদন মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ করে দেয় কৃষি বিভাগ। ফলে ১৫ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তবে খুচরা বাজারে স্থানীয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার আবার আমদানির অনুমতি দেয়। অনুমতি দেওয়ার দিন, অর্থাৎ ৫ জুন থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।

স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্র জানায়, ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ১০ দিনে ৫৯ হাজার টন পেঁয়াজ এনেছেন ১৪৬ জন ব্যবসায়ী। এই পেঁয়াজের গড় আমদানি মূল্য পড়ছে প্রায় ১৮ টাকা। শুল্ককরসহ কেজিপ্রতি ২২ টাকার মতো খরচ পড়ছে। আমদানিকারকেরা জানান, পরিবহনজনিত ক্ষতিসহ আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত করে প্রতি কেজি পেঁয়াজে আমদানিকারকদের খরচ পড়ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

মনির হোসেন হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করেন। প্রথম আলোকে তিনি জানান, স্থলবন্দরগুলো দিয়ে প্রতিদিন পেঁয়াজের ট্রাক আসছে। ভারতে এবার উৎপাদনও ভালো হয়েছে। ফলে আমদানি মূল্য বাড়ার শঙ্কা নেই।

স্থলবন্দর কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মোট পেঁয়াজের ৯৮ শতাংশ আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া বেনাপোল, বুড়িমাড়ী, সোনাহাট, বাংলাবান্ধা, শেওলা, বিবিরবাজার ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আসছে বাকি ২ শতাংশ।

দেশি পেঁয়াজ উধাও
পেঁয়াজ আমদানি বাড়ায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এখন দেশি পেঁয়াজের দেখা মিলছে না। পাইকারি আড়তগুলোতে এখন শুধু ভারতীয় পেঁয়াজ মিলছে।
খাতুনগঞ্জে হামিদুল্লা মিঞা মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ার পর এখন আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ কার্যত নেই এখন চট্টগ্রামের আড়তে। দামও কমে এখন পাইকারিতে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৬ টাকায় নেমেছে।

ভালো মানের পেঁয়াজ
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে, এমন তথ্য পাওয়ার পর বাংলাদেশের আমদানিকারকেরা পেঁয়াজ কেনার আগাম আদেশ দেন ভারতীয় রপ্তানিকারকদের কাছে। প্রতিবেশী দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। এই আদেশ পেয়ে আগেই ট্রাকে পেঁয়াজ বোঝাই করে স্থলবন্দরের দিকে পাঠাতে থাকেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

তবে আমদানির অনুমতি কার্যকর হতে দেরি হওয়ায় বেশ কয়েক দিন ট্রাকে বোঝাই করা ছিল পেঁয়াজ। অনুমতি দেওয়ার দিনই ঋণপত্র খুলে একই দিন পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এরপরও বেশ কয়েক দিন বস্তাবন্দী থাকায় গরমে নিচের দিকে থাকা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে শুরুতে আমদানি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের মান ভালো ছিল না।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক মনির হোসেন জানান, শুরুতে গরম ও বেশি দিন ট্রাকে পড়ে থাকায় পেঁয়াজের মান খারাপ হয়ে যায়। তবে এখন যেসব পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে, সেগুলোর মান ভালো। ভারতের নাসিক এলাকায় ট্রাকে বোঝাই করার পর পাঁচ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ হাতে পাচ্ছেন তাঁরা।

খাতুনগঞ্জে হামিদুল্লা মিঞা মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফারুক প্রথম আলোকে জানান, শুরুর দিকে নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু পেঁয়াজ এখনো বাজারে রয়ে গেছে। পাইকারিতে এসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন করে যেসব পেঁয়াজ আসছে, সেগুলোর মান ভালো।

পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হয়। এই অনুমতি নিয়েই ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে পারেন আমদানিকারকেরা।