বাংলাদেশ অতিক্রম করে মিয়ানমারে মোখা

কক্সবাজার উপকূল দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করে মিয়ানমার চলে গেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। আর কোনো ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

রোববার (১৪ মে) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলাসহ সব সমুদ্রবন্দরে ১০ ও ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, উপকূলীয় এলাকায় ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাত কমে যাবে। তবে সিলেট এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সোমবার (১৫ মে) থেকে রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হবে। তবে ১৬ তারিখের পর থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাবে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।

এর আগে আবহাওয়া অফিস জানায়, সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশ উপকূল ত্যাগ করবে মোখা। দুপুরে সেন্টমার্টিনে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৭ কিমি। মোখার তাণ্ডবে সেন্টমার্টিনের বেশ কিছু বাড়িঘর ও দুর্বল স্থাপনার রিসোর্ট ভেঙে পড়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হেনেছে কক্সবাজারে। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা পর কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে মোখা, যার সর্বোচ্চ আঘাতের সময় ছিল দুপুরে। তবে, কক্সবাজারে এখনও কেউ নিহতের খবর পাওয়া না গেলেও, দীর্ঘ ৯ ঘণ্টার তাণ্ডবে ২ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ১০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর প্রবল ঝোড়ো বাতাসে উপড়ে গেছে কয়েক হাজার গাছপালা।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার অতিক্রম করেছে। প্রশাসনের প্রস্তুতি আর জনগণের সচেতনতা, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। উপকূলের মানুষজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার ফলে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত করলেও, কক্সবাজারে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।’

জেলা প্রশাসক বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে কক্সবাজারে ১০ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। আর ২ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।

মুহাম্মদ শাহীন ইমরান আরও বলেন, সেন্টমার্টিনে ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। সেখানে গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। কাঁচা ঘরবাড়ি সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত সেন্টমার্টিনে দুর্যোগ পরবর্তী মানুষের সহায়তার কাজ করা হবে।

রোববার সকালে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরে ভাটা চলছে, তারপরও উত্তাল সাগর। বয়ে যাচ্ছে ঝোড়ো হাওয়া। বেড়ে যায় বাতাসের গতিবেগ। বেলা ১২ টা না বাজতেই শুরু হয় তুমুল বাতাস। এ সময় ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে শুরু করে কক্সবাজারে। বেড়ে যায় বাতাসের তীব্রতা, শুরু হয় হাল্কা বৃষ্টি। সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উড়তে থাকে বালিয়াড়ির বালিও। আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে সৈকতপাড়ের মানুষজন।

ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করলেও এখনও পর্যন্ত বয়ে যাচ্ছে ঝোড়ো হাওয়া। আর ঘূর্ণিঝড়টি ৯ ঘণ্টা স্থায়ী ছিল বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার অতিক্রম করতে ৯ ঘণ্টা সময় নিয়েছে। যার আঘাত বেশি হয়েছে দুপুরের দিকে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে অতিক্রম শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এখন বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো বাতাস অব্যাহত থাকবে।

ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে উপকূলে ২ লাখ ৫০ হাজারর মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে।