মোখা নিয়ে সুসংবাদ দিলো আবহাওয়া দফতর

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে আগের ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ। আবহাওয়া দফতর রোববার (১৪ মে) বেলা ১১টার সর্বশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে, এটি দক্ষিণ দিকে সরে মিয়ানমারে মূল আঘাত হানবে।

আবহাওয়া দফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মূল আঘাত হানবে মিয়ানমারে। বাংলাদেশের জন্য আগের ঝুঁকি নেই। টেকনাফের ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিক দিয়ে এটি স্থলভাগ অতিক্রম করবে।’

তবে বাংলাদেশের স্থলভাগ অতিক্রমের সময় সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ আবহাওয়াবিদ। তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর সময় হলো দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা। এ সময়ের মধ্যে স্থলভাগ অতিক্রম করবে মোখা। এর প্রভাবে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল ১২ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।’

এদিকে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ফেসবুকের এক পোস্টে জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্র যখন সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমারের মংডু জেলার মধ্যবর্তী স্থানের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা শুরু করেছে, সৌভাগ্যক্রমে ঠিক ওই সময় সমুদ্রে ভাটার শুরু হয়েছে। এছাড়া সৌভাগ্যক্রমে ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে সমুদ্রেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ফলে স্থলভাগে আঘাতের সময়ে এটি খুব ভয়ংকর হয়ে উঠবে না।

আবহাওয়া দফতরের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।

আবহাওয়া দফতর জানায় ঘূর্ণিঝড়টি সকাল ৯টায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।

তবে এর অগ্রভাগ কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করছে। ঝড়ের প্রভাবে এরই মধ্যে উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

আবহাওয়া দফতর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল ৭ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

আবহাওয়া দফতর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।

এছাড়া, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতিভারি (৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। ভারি বর্ষণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।