লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুনে যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ আরও ৬ আসামি গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম হত্যা মামলায় আরও ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে র‌্যাব ৪ জনকে ও পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ পর্যন্ত জোড়া খুনের ঘটনায় ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। সোমবার দুপুরে র‌্যাব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানী অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান ও জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বশিকপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মশিউর রহমান নিশান, রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহবায়ক দেওয়ান ফয়সাল, আওয়ামী লীগ কর্মী রুবেল দেওয়ান ও নাজমুল হোসেন। এরমধ্যে মামলার দ্বিতীয় আসামী নিশান ও ১১ নাম্বার আসামি রুবেলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নাজমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার রাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
এছাড়া রোববার পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ফারুক হোসেন ও আরমান হোসেন নামে ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। তারা এজাহার নামীয় আসামি নয় বলে জানা গেছে। সন্দেহজনকভাবে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
এর আগে ২৭ এপ্রিল র‌্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

তারা হলেন মনির হোসেন রুবেল, আজিজুল ইসলাম বাবলু, মো. সবুজ ও ইসমাইল হোসেন পাটওয়ারী। এরমধ্যে রুবেল র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।
র‌্যাব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানী অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহমুদুল হাসান বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ইউপি নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নোমান-রাকিবকে গুলি করে হতা করা হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদী ১৯৯৬ সালে নিজের নামে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। তার বাহিনীতে ৩০০ সক্রিয় সদস্য রয়েছে। যাদের মাধ্যমে তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। তাকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান ও তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরও জানান, কাশেম জিহাদী তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করে এলাকায় চাঁদাবাজী, টেন্ডাবাজি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ২০১৩ সালে দত্তপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন শামিম, ২০০০ সালে আইনজীবী নুরুল ইসলাম, দত্তপাড়া এলাকার আবু তাহের, বশিকপুরের নন্দীগ্রামের মোরশেদ আলম, করপাড়ার মনির হোসেন, উত্তর জয়পুরের সেলিম ভূঁইয়া ও কামাল হোসেন হত্যা মামলাসহ নোমান-রাকিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাশেম জিহাদী।

পুলিশ সুপার মো.মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, রিমান্ডে থাকা চার আসামী সবুজ,ইসমাইল হোসেন,আজিজুল হক বাবলু ও রুবেল হোসেন এই হত্যাকান্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিচ্ছে। তিনি জানান, এসব তথ্য যাচাই-বাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মামলার প্রধান আসামী আবুল কাশেম জিহাদীসহ অন্য আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে উত্তাল জেলাজুড়ে। প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও বিক্ষোভ মানববন্ধনসহ নানা কর্মসুচি পালন করেছে দলীয় নেতাকর্মীসহ অন্যরা। এঘটনার পর বশিকপুরসহ আশপাশের এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থায় বিরাজ করছে। রয়েছে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটর সাইকেলযোগে পোদ্দার বাজার থেকে নাগের হাটে যাচ্ছিলেন যুবলীগ নেতা নোমান ও তার সহযোগী অপর ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম। পশ্চিম বাজার এলাকার ব্রিজের পাশে পৌছালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদের গতিরোধ করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে।
এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান ঘটনাস্থলে মারা যায়। অপর গুরুতর আহত রাকিব ইমামকে উদ্ধার করে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা নেয়ার পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেও মারা যায়। পরেরদিন নিহত নোমানের বড় ভাই বশিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।