তাইওয়ানের চারপাশে চীনের যুদ্ধ মহড়া

তাইওয়ানের চারপাশে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে চীন। যেকোনো সময় সেখানে হামলা হতে পারে। তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে নিখুঁতভাবে টার্গেট করতে দ্বিতীয় দিনের মতো এই দ্বীপরাষ্ট্রটির চারপাশে সামরিক মহড়া চালাচ্ছিল চীন। তাইওয়ান বলছে, শনিবার দেশটির চারপাশ দিয়ে উড়ে গেছে চীনের কমপক্ষে ৭১টি যুদ্ধবিমান। ৪৫টি যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ান প্রণালির মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে। ফলে ওই অঞ্চলে একটি নতুন যুদ্ধের আশংকা দেখা দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। গত সপ্তাহে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আগে থেকেই এমন সাক্ষাৎ হলে কঠোর পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছিল চীন। তারই ধারাবাহিকতায় এই মহড়া চালাচ্ছে তারা।

তাইওয়ানের চারদিকে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে চীন। তবে তাদেরকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, তাইওয়ান আক্রান্ত হলে তাদের পক্ষ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক মহড়াও বৃদ্ধি করেছে।
চীনের এই আগ্রাসী মনোভাবে তাইওয়ানের কাছাকাছি চীনের ৯টি জাহাজ দেখা গেছে। বেইজিং সার্বিকভাবে এই অপারেশনের নাম দিয়েছে ‘জয়েন্ট সোর্ড’। সোমবার পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বলা হয়েছে, এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে দূরপাল্লার রকেট আর্টিলারি, নৌ-জাহাজ ডেস্ট্রয়ার, মিসাইল বোট, বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান, বোমারু, জ্যামার এবং জ্বালানি সরবরাহকারী রিফুয়েলার। চীনের সেনাবাহিনী এসব জিনিস মোতায়েন করেছে মহড়ায়।

কিন্তু এই অপারেশন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাইওয়ানের কর্মকর্তারা। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাইয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরকে বেইজিং সামরিক মহড়ার একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে বলে শনিবার চীনকে অভিযুক্ত করেছেন তাইপের কর্মকর্তারা। এই সামরিক অভিযানে ওই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তাকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে।

চীন থেকে তাইওয়ানের সবচেয়ে নিকটবর্তী পিঙটান দ্বীপের কাছে নোঙর করা চীনের একটি জাহাজ থেকে প্রথম দিনের মহড়ায় এক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে। তাইওয়ানের কোস্টগার্ড পরিচালনা করে ওশিন অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল। তারা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চীনের একটি যুদ্ধজাহাজকে আড়াল করে রেখেছে আরেকটি জাহাজের ছায়ায়। তবে এটা ঠিক কোথায় সেই লোকেশন জানাতে পারেনি তারা। ওই ফুটেজে একজন নাবিককে চিৎকার করে চীনা জাহাজের প্রতি রেডিওতে বলতে শোনা যায়, তোমরা আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছো। অনুগ্রহ করে দ্রুত এ অঞ্চল ছেড়ে যাও। যদি তোমরা অগ্রসর হতেই থাকো, তাহলে আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবো।

শনিবার সন্ধ্যার দিকে চীনের মহড়া শেষ হয়ে আসে। কিন্তু তাইপের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তারা বলেছেন, রোববার সকালে আবার চীনের যুদ্ধবিমান উড়া শুরু করেছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাইয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ভিন্নভাবে ব্যবহার না করতে চীনের প্রতি অনুরোধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে তাদেরকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছে, চীনের কর্মকা- ঘনিষ্ঠভাবে মনিটরিং করছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট রিসোর্স ও সক্ষমতা আছে বলে চীনকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বেইজিংয়ের পক্ষে থাকার জন্য ১৯৭৯ সালে তাইপের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাধিকবার বলেছেন, তাইওয়ানে যদি চীন হামলা চালায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাতে হস্তক্ষেপ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য গত বুধবার প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ম্যাকার্থিকে ধন্যবাদ জানান তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে তাইওয়ানের জনগণ আর নিঃসঙ্গ এবং একাকী মনে করেন না। উল্লেখ্য, স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির তাইওয়ান সফরে যাওয়ার কথা ছিল। তার পরিবর্তে তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাইয়ের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়াতে সাক্ষাৎ বেছে নেন। এর মধ্যদিয়ে চীনের ক্ষোভ এড়ানোর চেষ্টা করা হয়।