অবশেষে টেস্টে জয় বাংলাদেশের

টেস্ট মর্যাদা পাওয়া ১০টি দলের বিপক্ষে প্রথম দেখায় হেরেছে বাংলাদেশ। সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষেও প্রথম ম্যাচে হেরে যায় টাইগাররা তাও নিজেদের মাটিতে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে তেমনই শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ দিন সেই শঙ্কা উড়িয়ে ৭ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিকরা। আইরিশদের ১৩৮ রানের সহজ লক্ষ্য পাড়ি দিতে হারিয়েছে ৩ উইকেট। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহীম জ্বলে উঠেছিলেন গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসেও। তুলে নিয়েছেন অর্ধশতক। প্রায় তিন বছর পর দেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। এর আগে ২০২০ এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে শেষ জয় এসেছিল। ২০০০ এ টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে ১৩৭ টেস্ট ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা।

এক যুগ পর গতকাল পেয়েছে নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটে ১৭তম জয় তাও টানা পাঁচ ম্যাচ হারের পর। এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করেছে টেস্ট ফরম্যাটে এখনো কতটা পিছিয়ে আছে দল। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ ব্যাট করা আইরিশরা স্কোর বোর্ডে ২৯২ রান তুলে অল আউট হয়। সেই সুবাদে লিড পায় ১৩৬ রানের। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠের উইকেটে টেস্টে চতুর্থ দিন এই রান তাড়া করাও কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান হারের শঙ্কা দেখেননি। গতকাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘হারের শঙ্কা ছিল না। টেস্টে যেটা হয়, অনেক সময় থাকে কামব্যাক করার। ওয়ানডেতে একটু কম, টি-টোয়েন্টিতে খুবই কম। কখনোই কারও মাথায় ও রকম চিন্তা আসেনি। গতকাল আয়ারল্যান্ড ভালো খেলেছে এটা তাদের দিকে ভালো দিক। ওরা অনেক ফাইট শো করেছে, প্রথম দিকে আমরা হয়তো প্রত্যাশা করিনি। কিন্তু ওরা সংস্কৃতির দিক থেকেই ফাইটারও। ওটাই দেখিয়েছে।’ স্বাভাবিকভাবেই আইরিশদের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে পরিষ্কারভাবেই ফেভারিট বাংলাদেশ। প্রথম দু’দিন সেই দাপটও ধরে রেখেছিল টাইগাররা। তবে তৃতীয় দিন লড়াইয়ে আইরিশরা অভাবনীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, টাইগার বোলারদের ধৈর্যের বেশ কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছে তারা। তবে চতুর্থ দিন সকালে আবার ম্যাচটি নিজেদের দিকে নিয়ে আসে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ড দল ২৯২ রান তুললেও প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের থেকে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থাকায় সাকিব বাহিনীর সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৮ রানের। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় পা ফসকায়নি আজ, ২ উইকেট হারালেও লাঞ্চ ব্রেকের আগেই সংগ্রহ করে ৮৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে এই সময় লিটন দাসকে নিয়ে ওপেনিংয়ে আসেন তামিম ইকবাল। যদিও প্রথম ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের সঙ্গী ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুটা বেশ ভালোই করেছিল, স্বভাবজাত দ্রুতবেগে রান তুলতে থাকেন লিটন। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। দলীয় সংগ্রহ যখন ৫ ওভারে ৩৯ রান, তখন ১৯ বলে ২৩ করে আউট হন তিনি। যদিও ছোট এই ইনিংসেও একটি রেকর্ড গড়েছেন লিটন, বাংলাদেশের ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছুঁয়েছেন ৬ হাজার রান। অন্যদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে কেন শান্ত নয় লিটন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘জল্পনা-কল্পনা নেই। যদি জাকির ফিট থাকতো, তাহলে সে ওপেন করতো। এখানে জল্পনা-কল্পনা নেই। যেহেতু জাকির ফিট ছিল না, আমাদের অন্য কাউকে ওপেন করাতে হয়েছে। নরমালি শান্ত তিনেই সবসময় ব্যাটিং করতো। এবং করার কথাও। যদি জাকির থাকতো সে প্রথম অপশন ছিল। আমাদের কাছে জয় ও সাদমানের অপশন ছিল। কিন্তু চিন্তা করেছি যেহেতু একজন বোলার বেশি নিতে হবে সেহেতু একজন ব্যাটার কম নিয়েছি।’ অন্যদিকে ওয়ান ডাউনে এসেও হতাশ করেছেন শান্ত। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটার ফিরেছেন মাত্র ৪ রান করে, প্রথম ইনিংসেও অবশ্য রানের খাতা খুলতেই পারেননি তিনি। ১১ রানের মাঝে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবুও আগ্রাসন ছাড়েনি টাইগাররা, স্বাভাবিক খেলাই খেলতে থাকেন বাকিরা। দ্রুত ২ উইকেট হারালেও পথ হারায়নি বাংলাদেশ, দলকে জয়ের পথেই রাখেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীম। স্বাচ্ছন্দ্যেই রান তুলতে থাকেন তারা। তবে একসঙ্গে মাঠে থেকে জয় উদ্‌যাপন করা হয়নি, জয় থেকে যখন মাত্র ৩৩ রান দূরে থাকতে ৩১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তামিম। আউট হওয়ার আগে মুশফিকের সঙ্গে গড়েন ৭৪ বলে ৬২ রানের জুটি। তামিম আউট হলে মুমিনুল হককে সঙ্গে নিয়ে বাকি পথটা পাড়ি দেন মুশফিক। মুশফিক ৪৮ বলে ৫১ ও মুমিনুল অপরাজিত থাকেন ২২ বলে ২০ রানে। এই সময় দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ১৪ হাজার আন্তর্জাতিক রান সংগ্রহের কীর্তি গড়েন মুশফিক।