ট্রাম্প কি রাজনীতির শিকার না সত্যিই অপকর্মে জড়িত ?

১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে আমেরিকান সংবাদ মাধ্যম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং হোয়াইট হাউসের একজন ইন্টার্ন মনিকা লিউইনস্কির মধ্যে একটি কেলেঙ্কারির খবর উড়িয়ে দেয়। ক্লিনটন সেইসময়ে সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে লিউইনস্কির সাথে ১৮ মাসের দীর্ঘ সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। ১৯৯৫ সালে গোপনে এই প্রেমপর্ব শুরু হয় যখন ক্লিনটনের বয়স ছিল ৪৯ এবং মনিকার বয়স ছিল ২২। বেমালুম সেই সম্পর্কের কথা উড়িয়ে দিয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন -”আমার সাথে এই নারীর যৌন সম্পর্ক নেই।” সেই বছরের অক্টোবরে বিশেষ কাউন্সেল কেনেথ স্টার ক্লিনটনকে ইমপিচ করার ভিত্তি তৈরী করতে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে যথেষ্ট প্রমান সংগ্রহ করেছিলেন। প্রেসিডেন্টদের তাঁদের স্ত্রীদের সাথে প্রতারণা করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। জ্যাক কেনেডি বা ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের কথা ইতিহাসবিদরা সকলেই জানেন। হাউস রিপাবলিকানরা প্রথমে পাত্তা দেয়নি যে ক্লিনটনের সাথে একজন ইন্টার্নের সম্পর্ক থাকতে পারে। শুনলে অবাক হবেন, ঠিক একই সময়ে হাউসের যে রিপাবলিকান স্পিকার নিউট গিংরিচ ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি নিজেই তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে প্রতারণা করতে একজন রাজনৈতিক সহযোগীর সাথে গোপনে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে রিপাবলিকানরা ক্লিনটনকে এমন একটি অপরাধে জড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিলো যে অপরাধে তারাও সমান অপরাধী। ডেমোক্র্যাটরা যথার্থই যুক্তি দিয়েছিল যে ক্লিনটনকে তার যৌন জীবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।

ম্যানহাটন জেলা অ্যাটর্নি, অ্যালভিন ব্র্যাগ, ফেডারেল প্রচারণার অর্থ আইন লঙ্ঘনের জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগটি এরকম- ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত অ্যাটর্নির হাত দিয়ে একজন প্রাপ্তবয়স্ক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে একটি শেল কোম্পানির মাধ্যমে গোপনে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার অর্থ প্রদান করেছিলেন। যা পরে ট্রাম্প পরিশোধ করেছিলেন এবং ব্যবসায়িক ব্যয় হিসাবে নথিভুক্ত করেছিলেন। নিউ ইয়র্ক রাজ্যের আইন অনুসারে, আইনী ব্যয়ের জন্য মিথ্যা হিসাব দেখানো একটি ‘অপকর্ম’। কোনো দোষকে ‘অপরাধে’ উন্নীত করার জন্য একটি অপরীক্ষিত আইনি তত্ত্ব ব্যবহার করা প্রয়োজন যেখানে ব্র্যাগকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে ট্রাম্প একটি দ্বিতীয় অপরাধ করতে চেয়েছিলেন, যা এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ফেডারেল প্রচারণার অর্থ আইন লঙ্ঘন করার দিকে ফোকাস করা হবে। ট্রাম্প যে অনেক খারাপ কাজ করেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা এত দীর্ঘ যে তা শেষ হবার নয়। গণতন্ত্রের অবক্ষয়, বর্ণবাদীদের উৎসাহিত করা এবং যৌন নিপীড়নের একাধিক অভিযোগ রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। যদিও ট্রাম্প এবং তার সমর্থকরা মনে করেন এই অভিযোগ সবটাই রাজনৈতিক প্রণোদিত। তবে যে কোনো রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার ঝুঁকি রয়েছে। ফক্স নিউজের কাছে দর্শকরা জানিয়েছেন, প্রচারণার অর্থ আইন লঙ্ঘনের জন্য ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা ক্লিনটনের একজন ইন্টার্নের সাথে যৌন সম্পর্কে মিথ্যা বলার সমান।ব্র্যাগ যে ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছেন তা হল যে তিনি যদি এই ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হন, তবে তিনি প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অন্যান্য অত্যন্ত গুরুতর তদন্তগুলিকে বৈধতা দিতে পারেন। যার মধ্যে রয়েছে জর্জিয়ার নির্বাচনী ফলাফলের সাথে কারচুপি এবং শ্রেণিবদ্ধ নথি চুরির অভিযোগ। এই মামলার বিশাল আইনি প্রভাব রয়েছে, পাশাপাশি এই মামলা ট্রাম্প সমর্থকদের উস্কে দিতে পারে।

গণতন্ত্রের অর্থ হল অতীত ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট সহ সবাইকে তাদের অপরাধের জন্য দায়বদ্ধ করা। কিন্তু সব অপরাধ একরকম নয়, সত্যিকারের নগণ্য অপরাধের মধ্যে পার্থক্য জানাটা এখানে বিশেষ প্রয়োজন। আমেরিকান গণতন্ত্রের স্বার্থে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য ব্র্যাগের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তিনি যদি সেই অভিযোগ প্রমান করতে ব্যর্থ হন তাহলে রিপাবলিকানদের পক্ষে আমেরিকানদের বোঝানো অনেক সহজ হয়ে যাবে যে ‘ট্রাম্প সর্বদা রাজনীতির শিকার’ হয়েছেন।