আঙুলের ছাপ আর মুখচ্ছবি নেয়ার মানে কি ট্রাম্প গ্রেপ্তার?

দুই হাজার ষোল সালে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার অর্থ দেয়ার ঘটনা তদন্তের জের ধরে ওঠা এক অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রেফতার হতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে।

৭৬ বছর বয়সী মি. ট্রাম্প ফ্লোরিডা থেকে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন সোমবার। মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

‘কঠিন মামলা’
দুই হাজার ষোল সালে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস সংবাদ মাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করেন এই বলে যে, তিনি তার জবানবন্দী বিক্রি করতে চান। তার ভাষায় ২০০৬ সালে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ব্যভিচারী সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন।

মি. ট্রাম্পের দল এ সম্পর্কে আভাস পেলে তার আইনজীবী মাইকেল কোয়েন মিজ ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ রাখার জন্য এক লাখ ৩০ হাজার ডলার তাকে দেন।

প্রসিকিউটররা বলছেন, এটি আইনি ফি হিসাবে মি. ট্রাম্পের ব্যবসায়িক নথিতে দেখানো হয়েছে যা নথি জাল করার সামিল- নিউ ইয়র্কে এটি ফৌজদারি অপরাধ।

প্রসিকিউটররা আরো অভিযোগ করতে পারেন যে, এই কর্মকাণ্ড নির্বাচনী আইনের লংঘন, কারণ তিনি মিজ ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের বিষয়টি লুকানোর চেষ্টা করেছিলেন যার উদ্দেশ্য ছিল তার সম্পর্ক সম্বন্ধে ভোটারদের না জানানো। নথি জাল করে কোন অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা আরেকটি অপরাধ, বরং এটি আরো মারাত্মক অভিযোগ।

প্রসিকিউটররাও বলছেন যে, যেকোন ভাবেই হোক না কেন, এটা কোন সরল মামলা নয়। এ ধরনের বিচারের নজির এর আগে খুব কম আছে এবং প্রচারণায় অর্থায়ন ও ব্যক্তিগত খরচের মধ্যে থাকা সীমারেখা অতিক্রম করার কারণে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।

নিউইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির সাবেক অর্থ বিষয়ক প্রসিকিউটর ক্যাথেরিন ক্রিস্টিয়ান বলেন, “এটা কঠিন হতে যাচ্ছে।”

ট্রাম্পের কি আঙুলের ছাপ নেয়া হবে?
বিবিসির ওয়াশিংটন সংবাদদাতা অ্যান্টনি যারকার বলছেন, যখন সাবেক প্রেসিডেন্টের আঙুলের ছাপ নেয়া হবে এবং আদালতে তা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শেষ হবে, তখন এর অর্থ দাঁড়াবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তিনি হেফাজতে রয়েছেন।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে মি. ট্রাম্পের আঙুলের ছাপ নেয়া হবে। তাকে কিছু দলিলপত্র পূরণ করতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে চলমান কোন ফৌজদারি অভিযোগ আছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হবে।

এসময় তাকে তার সাংবিধানিক অধিকার বিষয়ে অবহিত করা হবে। তাকে মনে করিয়ে দেয়া হবে আইন অনুযায়ী তার অধিকারগুলো কী এবং সেই অধিকার মোতাবেক তিনি পুলিশের সাথে কথা বলতে অস্বীকার করতে পারেন।

তবে এই প্রক্রিয়ার সময় মি. ট্রাম্পকে কিছু ছাড় দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মি. যারকার।

যেমন, মি. ট্রাম্পের আইন বিষয়ক টিম জানিয়েছে যে, তাকে হাতকড়া পরানো হবে না। ধারণা করা হচ্ছে যে, জড়ো হওয়া গণমাধ্যমের সামনে দিয়ে চিরাচরিতভাবে ‘হেঁটে’ নয় বরং সংরক্ষিত একটি প্রবেশদ্বার দিয়ে আদালতে প্রবেশ করবেন তিনি।

একবার ভেতরে প্রবেশ করার পর কর্মকর্তারা মি. ট্রাম্পের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করবেন।

তবে সাবেক প্রেসিডেন্টকে আসামীদের মতো ‘মুখচ্ছবি’ তোলার জন্য পোজ দিতে হবে কিনা তা নিয়ে এখনো যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

সোমবার মি. ট্রাম্পের অ্যাটর্নিদের একজন আলিনা হাব্বা সিএনএনকে বলেন, তাকে মুখচ্ছবি তোলার জন্য নেয়াটা ঠিক হবে না কারণ তার মুখচ্ছবি “বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত মুখের একটি” এবং যেখানে মুখচ্ছবি তোলার উদ্দেশ্যই হচ্ছে সনাক্ত করা।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে বলা হয় যে, বিচারক মি. ব্র্যাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ৭৬ বছর বয়সী মি. ট্রাম্পকে মুখচ্ছবি তোলার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

ছবি তোলা হলেও জনগণ সেটা কখনো দেখবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ নিউ ইয়র্ক রাজ্যের আইন অনুযায়ী, এটি প্রকাশ করতে হলে সাবেক প্রেসিডেন্টকে অনুমতি দিতে হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম বলছে যে, তিনি ছবি প্রকাশের বিরুদ্ধে থাকবেন না।

গ্রেফতার বিষয়ক সাধারণ নথি পূরণ করার মাধ্যমে তার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নেয়া হবে এবং তদন্তকারীরা কোন বিশেষ গ্রেফতারি পরোয়ানা বা অভিযোগের ক্ষেত্রে সেগুলো বিবেচনা করবেন।

এরপর মি. ট্রাম্পকে আদালতে হাজির করার আগ পর্যন্ত তিনি একটি সংরক্ষিত জায়গা বা কারাগারের কক্ষে অপেক্ষা করবেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানির সময় যখন তাকে একজন বিবাদী হিসেবে বিচারকের সামনে উপস্থিত করা হবে- তখন সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বিচারকার্য কখন শুরু হবে সে বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি বলে ওয়াশিংটন থেকে জানাচ্ছেন বিবিসির অ্যান্টনি যারকার।

মামলা দায়েরের পর এবং বিচারক নির্ধারিত হওয়ার পর এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে- যেমন বিচারের সময়সূচি।

বিচারক এবং আইনি টিম পরে তার পরবর্তী শুনানির জন্য একটি তারিখ ঠিক করবেন। এছাড়া আরো একটি প্রক্রিয়া থাকবে যেখানে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির দপ্তর তাদের সব তথ্য মি. ট্রাম্পের লিগ্যাল টিমের কাছে হস্তান্তর করবে।

বাস্তবে, আরেকবার শুনানি অনুষ্ঠানের আগে আরো কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

যদি বিচার অনুষ্ঠিত হয়, অন্যায় করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে সাধারণত জরিমানা করা হয়। মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ প্রমাণিত হলে, তার সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে, যদিও কিছু আইন বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি এবং তার কারাগারে থাকার সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীণ।

এরপরও কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবে?
কোনো অভিযোগ বা ফৌজদারি অপরাধের পক্ষে রায় হলেও, মি. ট্রাম্প যদি চান তাহলে তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণা চালানো অব্যাহত রাখতে পারবেন। আর তিনি এরইমধ্যে আভাস দিয়েছেন যে, যাই হোক না কেন তিনি সামনে এগিয়ে যাবেন।

বাস্তবিকপক্ষে, যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোন আইন নেই যা একজন প্রার্থী, যিনি অপরাধের জড়িত থাকার কারণে দণ্ডিত হয়েছেন তাকে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো বা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন থেকে রুখবে। এমনকি কারাগারে থেকেও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তিনি।

তবে মি. যারকার বলছেন মি. ট্রাম্প গ্রেফতার হলে সেটা তার প্রেসিডেন্সিয়াল প্রচারণাকে আরো জটিল করে তুলবে।