এশিয়া জুড়ে শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং জায়ান্ট ক্রেডিট সুইসের সমস্যার জেরে এখন উদ্বেগে রয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্কিং সেক্টর। বৃহস্পতিবার এশিয়া জুড়ে শেয়ারবাজারে বড় পতন হয়েছে। জাপান, হংকং এবং অস্ট্রেলিয়ার ব্যাঙ্কের শেয়ারগুলি ১% এরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। ক্রেডিট সুইস বলেছিল যে অর্থায়নের জন্য তারা ৫০ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক (৫৪ বিলিয়ন ডলার) ধার করবে। তবে ক্রেডিট সুইসের আর্থিক প্রতিবেদনে ইতিবাচক কিছু না থাকায় ব্যাংকের শেয়ার তলিয়ে যায়। দেশের ১৬ তম বৃহত্তম সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক, এবং ঠিক তার দুই দিন পরে সিগনেচার ব্যাঙ্কের পতনের ফলে গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে সমস্যা দেখা দেয়। টোকিওর কেইও ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক সায়ুরি শিরাই বিবিসিকে বলেছেন, ”ছোট ব্যাঙ্কগুলি ক্রেডিট সুইসের সমস্যার কারণ। বিনিয়োগকারী এবং ঋণদাতারা উদ্বিগ্ন। ব্যাঙ্কগুলি তহবিল সংগ্রহের সমস্যায় ভুগতে পারে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী এসএমই এবং স্টার্ট-আপগুলি প্রভাবিত হবে।” মিড-ডে এশিয়ান ট্রেডিংয়ে জাপানের Nikkei 225 সূচক ১.১% কমেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দিন দেখার পর টপিক্স ব্যাংকের শেয়ার সূচক ৪% এরও বেশি কমে গেছে।

সম্পদের দিক থেকে দেশের বৃহত্তম ঋণদাতা মিতসুবিশি ইউএফজে ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের শেয়ার ৩% কমেছে। এটি সুমিতোমো মিৎসুই ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ এবং মিজুহো ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের লোকসানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। হংকং এবং সিডনির সূচকগুলি ১.৫% এর বেশি কমেছে। যদিও এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজিং পার্টনার স্টিফেন ইনেস বলেছেন, ভালো পুঁজির কারণে এই পর্যায়ে এশিয়ায় ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি কম। ১৮৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্রেডিট সুইস সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অর্থ পাচারের অভিযোগ সহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির মুখোমুখি হয়েছে। যার জেরে ২০২১ এবং ২০২২ সালে ক্ষতির মুখে পড়ে ব্যাংকটি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ব্যাংকার লাভের আশা কম। মঙ্গলবার ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে দুর্বলতার প্রকাশ বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগকে নতুন করে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই টানাপড়েনের মধ্যেই ক্রেডিট সুইসের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার সৌদি ন্যাশনাল ব্যাংক বলেছে যে তারা সুইস ব্যাংক থেকে আর বেশি শেয়ার কিনবে না। সেই সময়ে, ক্রেডিট সুইস জোর দিয়ে বলেছিলো যে তার আর্থিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। তা সত্ত্বেও ঋণদাতাদের শেয়ার বুধবার ২৪% নিচে নেমে যায়। এর জেরে অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিও আশঙ্কায় ভুগছে। স্পেন ও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীরা ঋণদাতাদের উদ্বেগ কমানোর জন্য এগিয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার, ক্রেডিট সুইস বলেছিল যে লিকুইডিটিকে শক্তিশালী করতে তারা সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫০ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক পর্যন্ত ধার করতে পারে। সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের পতনের পর ব্যাঙ্কগুলির বন্ডের মূল্য উদ্বেগগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ক্রমবর্ধমান সুদের হার সেই বন্ডগুলিকে কম মূল্যবান করে তুলেছে। ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ এবং ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড সহ বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির মুদ্রাস্ফীতি রোধের চেষ্টা সুদের হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করেছে। পরিস্থিতি সামলাতে বাধ্য হয়ে ব্যাঙ্কগুলি তাদের হাতে থাকা বন্ডগুলি বিক্রি করতে পারে। ২০০৮ সালের পর থেকে প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে ঋণ প্রদানে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবার পর এটি মার্কিন ব্যাঙ্কিং সেক্টরে সবথেকে বড় বিপর্যয় ছিল।