যৌতুক ও মাদকের আগ্রাসন রোধে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

আন্জুমানে রজভীয়া নুরীয়া ট্রাস্টের অঙ্গ সংগঠন রজভীয়া নুরীয়া কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে আগামী ১১ মার্চ শনিবার দুপুর ২টা হতে চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদ ময়দানে যৌতুক-মাদকবিরোধী মহাসমাবেশ, গুণীজন সংবর্ধনা ও বর্ণাঢ্য র‌্যালী অনুষ্ঠিত হবে। মহাসমাবেশ উপলক্ষে ০৯ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আনজুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব পীরে তরিকত আল্লামা মুহাম্মদ আবুল কাশেম নূরী (মুজিআ)। তিনি বলেন, আজ হতে ১৩ বছর আগে ২০১০ সনে দেশের অন্যতম বৃহৎ দ্বীনি ও সেবামূলক সংস্থা রজভীয়া নূরীয়া কমিটি বাংলাদেশ এর আয়োজনে এবং আমার আহ্বানে চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে যৌতুক বিরোধী মহাসমাবেশের মাধ্যমে দেশে বৃহৎ পরিসরে ও বৃহৎ আয়োজনে যৌতুকবিরোধী আন্দোলন সূচিত হয়। পরবর্তীতে বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ সারা দেশে টানা বেশ কয়েক বছর ধরে যৌতুক বিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজন করা হয়। যৌতুক দেয়া-নেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম, জঘন্য পাপ এবং এটি সামাজিক বড় ব্যাধি ও দুষ্টক্ষত তা দেশবাসীকে জানানো, যৌতুকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলা, যৌতুককে ঘৃণা করতে শেখানোই প্রতিবছর যৌতুকবিরোধী এ মহাসমাবেশ আয়োজনের মূল লক্ষ্য। পরবর্তীতে মাদকের বিস্তারে দেশের যুব সমাজ যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে যাচ্ছিল তখন আমি যৌতুকের পাশাপাশি মাদক বিরোধী আন্দোলনও শুরু করি। এবছর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ¦ মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী, মাইজভাণ্ডার দরবারের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী আল-মাইজভাণ্ডারী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, আহলে সুন্নাতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব আল্লামা মাসউদ হোসাইন আলকাদেরী, লেখক গবেষক ড. মাসুম চৌধুরী, আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ দৌলতী সহ সরকারী ও বেসরকারী উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিবর্গ, বিশিষ্ট আলেম-উলামা, পীর মাশায়েখ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাংবাদিকরা যৌতুক-মাদকবিরোধী মহাসমাবেশ, গুণীজন সংবর্ধনা ও বর্ণাঢ্য র‌্যালীতে অতিথি ও আলোচক হিসেবে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলা উপজেলা থেকেও মহাসমাবেশে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণ ঘটবে বলে আমরা আশা করছি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরী বলেন, যৌতুক বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার নয়। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে দেশে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সব সম্প্রদায়ে যৌতুক দেয়া-নেয়া চলছে। তবে যৌতুকের সুদূরপ্রসারী কুফল এবং যৌতুক-নেয়া দেয়া যে সামাজিক অনাচার ও জুলুম দেশবাসীকে পুরোপুরিভাবে আমরা জানাতে ব্যর্থ হয়েছি বলে এখনো যৌতুকমুক্ত দেশ গড়ে উঠেনি। টাকার জোরে ধনীরা পাত্র পক্ষকে দু’হাতে যৌতুক দিচ্ছেন, গাড়ি-ফ্রিজ-এসিসহ ৩/৪/৫ হাজার বরযাত্রী খাওয়াচ্ছেন। এমনকি লাখো কোটি টাকা বিয়ের খরচের জন্য মাঠে কোমর বেঁধে নামেন ধনীরা। আর এর কুফল ভোগ করেন গরিবরা। এতে চারপাশের গরীব দুস্থ অসহায় কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। ধনীদের দেখানো জুলুমতান্ত্রিক যৌতুকের আগ্রাসী জৌলুস থেকে গরিব পরিবারগুলোকে বাঁচাতে রাষ্ট্রকেই আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দেশে যৌতুক বিরোধী আইন আছে। কিন্তু বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই। বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে যে আইন আছে, সারা দেশে তা মোটামুটি কার্যকর বলে বাল্য বিয়ে কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। উপজেলা ইউএনও বা থানা প্রশাসন বিয়ের আসরে গিয়ে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে, পাত্র ও কন্যাপক্ষকে জরিমানা করছে-ফলে বাল্য বিয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে। অনুরূপভাবে যৌতুক দেয়া-নেয়া ঠেকাতে প্রশাসনের নজরদারি ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া আজ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌতুক প্রথা ও মাদককে থামাতে গণমাধ্যম এবং মসজিদের ইমাম-খতিবরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারও পারে যৌতুকবিরোধী গণসচেতনতা গড়ে তুলতে। যৌতুক ও মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে সরকার, সামাজিক সংস্থা, ওয়ায়েজ বা বক্তা, মসজিদের ইমাম-খতিবসহ প্রত্যেক মানুষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী ১১ মার্চ ২০২৩ সনে (আগামী শনিবার) চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদ ময়দানে আয়োজিত যৌতুক ও মাদকবিরোধী মহাসমাবেশে সর্বস্তরের মানুষকে অংশগ্রহণের জন্য আনজুমানের প্রেসিডেন্ট পীরে তরিক্বত আল্লামা আবুল কাশেম নূরী (মজিআ) বিশেষভাবে আহবান জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ¦ কাজী মুহাম্মদ ফোরকান রেজা, আবু ছালেহ আঙ্গুর, মুহাম্মদ হাসান আলী, প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মাহমুদুল হক রাজিব, মহাসচিব মুহাম্মদ মিয়া জুনায়েদ, মুহাম্মদ জাহিদুল হাসান রুবায়েত, সদস্য সচিব মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরী, মুহাম্মদ আবুল হাসান, মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী ফারুকী, মাওলানা কুতুবউদ্দিন শাহ্ নূরী, মুহাম্মদ ওমর ফারুক, মাওলানা আব্দুল কাদের রজভী, শায়ের এনামুল হক এনাম, মুহাম্মদ জাকারিয়া, মুহাম্মদ আয়ুব তাহেরী, মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন সিদ্দিকী, মুহাম্মদ তারেক আজিজ, মাওলানা আবুন নূর মুহাম্মদ হাস্সান নূরী, এস এম ইকবাল বাহার, মুহাম্মদ ওসমান জাহাঙ্গীর, মুহাম্মদ মাহফুজ, এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আলমগীর, মাওলানা এনামুল হক কাদেরী, মাওলানা জাফর কামালী, মাওলানা সিরাজুল মোস্তফা, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ জাহেদ, নুরুল হুদা মুহাম্মদ আক্কাস, মুহাম্মদ আমানউল্লাহ, মুহাম্মদ জাকির হোসাইন সওদাগর, মুহাম্মদ শফিক, মুহাম্মদ সরোয়ার উদ্দিন, মুহাম্মদ মুহাম্মদ সাফওয়ান নূরী, মুহাম্মদ সায়হান নূরী, মুহাম্মদ মিনহাজ নূরী, মুহাম্মদ শাকিল, মুহাম্মদ রুহুল আমিন, মুহাম্মদ বরাত প্রমুখ।