হঠাৎ দুর্ঘটনা বা আঘাত পেলে

লক্ষণ ও উপসর্গ
ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা সংবেদনশীলতা, শারীরিক কার্যকলাপ চালাতে অসমর্থতা, রক্তপাতপূর্ণ ক্ষত, হেমাটোমা, বমি, মাথা ঘোরা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, প্রচণ্ড ব্যথায় কাতর হওয়া।

কারণ
দুর্ঘটনা, পুড়ে যাওয়া, শারীরিক নির্যাতন, আত্মহত্যার প্রচেষ্টা, খেলতে গিয়ে আঘাত লাগা, যুদ্ধ করা বা ঝগড়া করা প্রভৃতি।

করণীয়
ভোঁতা আঘাত পেলে করণীয়:
কম ধারালো বস্তু দিয়ে আঘাত পেলে সেই স্থানটি ফুলে যায়, ব্যথা হয়, লাল বা কালো হয়, নড়াচড়ায় অসুবিধা হয়। অনেক সময় আঘাতের কারণে নার্ভ ইনজুরি হয়। এটি কিন্তু মারাত্মক একটি সমস্যা।
* আঘাতের স্থানে কোনো কিছু মালিশ না করা।
* প্রথম অবস্থায় ঠাণ্ডা বা বরফ দেয়া।
* আঘাদের অংশ বিশ্রামে রাখা।
* প্রচুর পানি পান করা।
* স্বল্পমাত্রায় ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার করা।
* বুকে বা মাথায় অথবা পেটে আঘাত পেলে অনতিবিলম্বে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
হাতে বা পায়ে ছুলে যায়নি এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে। রাস্তাঘাট বা খেলার মাঠে পড়ে গিয়ে বা যানবাহনের দুর্ঘটনায় প্রায়ই এমনি ঘটে। ছুলে গেলে সাধারণত চামড়া উঠে বা ছিঁড়ে যায়। তবে খুব বেশি গভীর হয় না। ময়লা বা ধুলাবালু আটকানো থাকে। অল্প অল্প রক্তপাত হতে পারে, বিশেষ করে প্রেসার পয়েন্ট বা হাড়ের উপরের অংশে।
* প্রথমে নরমাল স্যালাইন দিয়ে পরিষ্কার করা ভালো। তবে নরমাল স্যালাইন না থাকলে ট্যাপের ঠা-া পানি দিয়ে ছুলে যাওয়া স্থানটি পরিষ্কার করে ভালো কোনো অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন লাগাতে হবে।
* ছুলে যাওয়ার স্থানটি খুব বেশি গভীর না হলে অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন ক্রিম দিনে তিন-চারবার লাগানো যেতে পারে।

আর গভীরতা বেশি হলে প্রথম এক-দুইদিন ড্রেসিং দিয়ে ঢেকে রাখা ভালো। তবে কখনোই ড্রেসিং বেশিদিন দেয়া ঠিক নয়। এ জাতীয় সমস্যা খোলা রেখে চিকিৎসা করাই ভালো। অনেক সময় ক্ষতের গভীরে চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বাঁধে, যা ড্রেসিং তৈরির মাধ্যমে চামড়ার পচন ধরায়। সে ক্ষেত্রে ছোট করে কেটে রক্ত বের করে দেয়া ভালো।
* যদি টিটেনাসের টিকা নেয়া না থাকে, সে ক্ষেত্রে টিকা নিয়ে নেয়া উচিত।
সুঁচ বা পিনজাতীয় বস্তুর আঘাত
সাধারণত যারা সেলাইয়ের কাজ করেন, তাদের এ ধরনের আঘাত বেশি হয়, যাকে বলে নিডলস্টিক ইনজুরি। আঘাতটি অতি সামান্য হলেও একে অবহেলা করা উচিত নয়। ছোট সমস্যা অনেক সময় জটিল আকার ধারণ করে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের জন্য নিডলস্টিক ইনজুরি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

করণীয়
প্রথমে চাপ দিয়ে রক্ত বের করে দেয়ার চেষ্টা করুন।
ভালো কোনো অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন দিয়ে ড্রেসিং করানো।
প্রয়োজেনে টিটেনাসের টিকা নিন।
প্রথম তিন-চার দিন লক্ষ্য রাখুন, আক্রান্ত স্থানটি লাল হয়ে ফুলে যায় কিনা। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

হঠাৎ অঘাত পেলে
হঠাৎ আঘাত পেলে শরীরের ওই নির্দিষ্ট জায়গায় অতিরিক্ত চাপ পড়লে ফুলে যায়। এ ধরনের আঘাতে যে সমস্যা হয়, তাকে সাধারণত সফট বা নরম টিস্যু ইনজুরি বলে। আঘাত হাত-পায়ের, কোমরের বা শরীরের অন্য জায়গার মাংসপেশিতে, হাড়ে, জয়েন্টে নার্ভ, লিগামেন্টের অবস্থানগত পরিবর্তনের জন্য ব্যথা হয়। আবার কেউ মাথায়ও আঘাত পেতে পারে, যার ফলে বাহ্যিক-অভ্যন্তরীণ দুই ধরনেরই ক্ষতি হতে পারে। একেক জায়গার আঘাতে চিকিৎসার ধরন পরিবর্তিত হয়ে থাকে। সব আঘাতই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু মাথায় আঘাত সব সময় বেশি গুরুত্ব বহন করে।

হাতে-পায়ে আঘাত পেলে
হঠাৎ যেসব আঘাতগুলো পেয়ে থাকে- কোনো দুর্ঘটনায় আঘাত, খেলাধুলার সময় আঘাত, মাংসপেশিতে হঠাৎ টান কিংবা পা পিছলে পড়ে গেলে। এসব কারণে সফট টিস্যু ইনজুরি হয়। আঘাতের তীব্রতা বেশি হলে হাড় ভেঙে যেতে পারে। হাড় ভেঙে গেছে সন্দেহ হলে অবশ্যই তা এক্সরে করে দেখতে হবে এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসা নিতে হবে।

লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।