প্রস্টেট ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা

একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের চরম উন্নতির যুগেও লাখ লাখ মানুষ আজ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। পৃথিবীতে প্রায় ২০০ প্রকারের ক্যান্সার রয়েছে, প্রতিটি ক্যান্সারেরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আশার কথা প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব। ক্যান্সার যেখানে গঠিত হয় সেই অঙ্গের নামেই নামকরণ করা হয়। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় প্রস্টেট ক্যান্সার।

প্রস্টেট গ্রন্থি
শুধুমাত্র পুরুষদেরই প্রস্টেট গ্রন্থি রয়েছে। এর আকার অনেকটা কাজুবাদামের সমান। মূত্রথলির নিচ থেকে যেখানে মূত্রনালী বের হয়েছে সেটির চারপাশজুড়ে এই গ্রন্থিটি বিদ্যমান। এর মধ্যদিয়েই মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। এই গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের জন্য কিছুটা তরল পদার্থ তৈরি করা। যৌনকর্মের সময় যে বীর্য স্খলিত হয় সেটি আসলে শুক্রাণু এবং এই তরল পদার্থের মিশ্রণ।

প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যা
কোনো কারণে যদি প্রস্টেট বড় হয়ে যায় তাহলে মূত্রনালীর মুখ সংকুচিত হয়ে আসে।

ফলে মূত্র বের হতে সমস্যা হয়। সাধারণত প্রস্টেটে তিন ধরনের সমস্যা দেখা যায়: সাধারণ প্রস্টেট বড় হওয়া, প্রস্টেটের প্রদাহ (প্রস্টাইটিস) এবং প্রস্টেট ক্যান্সার। এই সবগুলোর ক্ষেত্রেই সাধারণত একইরকম লক্ষণ দেখা যায়: ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে রাতের বেলায়। প্রস্রাবের প্রচ- বেগ পাওয়া, এমনকি মাঝেমধ্যে বাথরুমে যাওয়ার আগেই প্রস্রাব করে ফেলা। প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া। প্রস্রাব করতে প্রচুর সময় লাগে। প্রস্রাবে বেগ থাকে না। প্রস্রাব করার পরেও মূত্রথলিতে প্রস্রাব রয়েছে এমন অনুভব হওয়া। প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা হওয়া। বীর্যপাতের সময় যন্ত্রণা হওয়া। অণ্ডকোষে ব্যথা। এই লক্ষণ বা উপসর্গগুলোর এক বা একাধিকটি যদি কারও মধ্যে দেখা যায় তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সার
পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সার খুবই সাধারণ। প্রস্টেট গ্রন্থির মধ্যে কোষগুলো যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে শুরু করে তখনই ক্যান্সার হতে পারে। সাধারণত ৫০ বছরের পর পুরুষদের প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এর চাইতে কম বয়সেও প্রস্টেট ক্যান্সার হতে পারে। বয়স যতো বাড়তে থাকে, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও ততোই বাড়তে থাকে। পরিবারের কারও যদি প্রস্টেট ক্যান্সার থাকে তাহলেও ঝুঁকির সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।
ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য সবগুলো উপসর্গের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কারণ বেশির ভাগ সময়েই প্রস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। প্রস্টেট খুব ছোট একটা অঙ্গ হওয়ায় খুব বড় কোনো লক্ষণ বুঝতে পারা যায় না। তাই উপরের উপসর্গগুলোর এক বা একাধিক দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের নিকট পরীক্ষার জন্য যাওয়া উচিত।

চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান। অপারেশনবিহীন ঝামেলামুক্ত চিকিৎসা হওয়ায় প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত রুগীগণ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছে। শেষ বয়সে যারা অপারেশনের ঝুঁকি নিতে চান না তারাই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণে বেশি আগ্রহী। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ভাণ্ডারে ক্যান্সার চিকিৎসায় অসংখ্য কার্যকরী ওষুধ রয়েছে যার পরশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ক্যান্সার রুগী আরোগ্য লাভ করছে। সাধারণ মানুষ আজ বুঝেছেন যে, ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সুশীতল ছায়া অধিকতর আরামদায়ক। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে ক্যান্সার রোগীদেরকে স্বল্পসময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। তাই আজ সচেতন নাগরিকগণ ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিও চিকিৎসার দিকে ঝুঁকছে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি রুগীর দ্রুত উন্নতির জন্য নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ঘুম, পরিমিত ব্যায়াম, মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপন ইত্যাদির দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

লেখক: ডা. এম এ হক, পিএইচ. ডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। গবেষক ও চিকিৎসক (ক্রনিকডিজিস ও ক্যান্সার)।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্র্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০৩১০