যদি মলদ্বার বেরিয়ে আসে, পরিত্রাণের উপায়

কলোরেকটাল রোগের মধ্যে পায়খানা করার সময় মলদ্বার অনেকখানি নিচে ঝুলে পড়ে এবং চাপ না দিলে ভেতরে যায় না এটিও একটি রোগ। যাকে সাধারণ ভাষায় আমাদের দেশে আনিক আলিশ বের হওয়ার কথা বলে থাকেন। অনেকে এরকম হলে গুরুত্ব দিতে চান না। পরে জটিলতা বেশি হলে চিকিৎসকের কাছে এসে এমনটির কথা বলে থাকেন। এ রোগে রোগীর পায়ুপথ মলদ্বারের বাইরে বেরিয়ে আসে। সাধারণত পায়খানা করার সময় মলদ্বার বাইরে ঝুলে পড়ে। এরপর রোগীরা অনেক সময় হাত দিয়ে এটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেন। এ রোগটি শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সেই হতে পারে। মহিলাদের হয়ে থাকে। বাচ্চাদের সাধারণত তীব্র ডায়েরিয়ার পর এ রোগ দেখা দেয়।

তলপেটের কিছু গঠনগত সমস্যা এ রোগের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় পায়ুপথ অন্যান্য মাংসপেশির সঙ্গে আঁকড়ে থাকে। কিন্তু এ রোগীদের ক্ষেত্রে এর অভাব দেখা যায়। এ রোগে বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে মলত্যাগের অভ্যাসের সমস্যা যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব, রেকটামের সঙ্গে সন্নিহিত অস্থির দৃঢ় সংযুক্তির অভাব ইত্যাদি। আবার মানসিক রোগীদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়।
লক্ষণসমূহ
* মলদ্বার পায়খানা করার সময় অনেকখানি নিচে ঝুলে পড়ে এবং চাপ না দিলে ভেতরে যায় না।
* বেশি ওজন তুললে অথবা কাশি দিলেও কখনো কখনো আলিশ বেরিয়ে আসে।
* রক্ত যায় না তবে মিউকাস যায়।
* তবে যখন পায়ুপথ বেশি ঝুলে পড়ে এবং ঢুকানো যায় না তখন রক্ত যেতে পারে।
* এ সমস্যার বেশির ভাগ রোগীই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে থাকেন।
* অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগী পায়খানা আটকে রাখতে ব্যর্থ হয়।
* দেখা যায় কখনো কখনো ঝুলে পড়া অংশ চেষ্টা করেও ভেতরে ঢুকানো যায় না * অবস্থা বেশি খারাপ হলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পচন ধরতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে জরায়ুও বেরিয়ে আসতে পারে এবং মূত্রথলিও ঝুলে পড়তে পারে, যার কারণে প্রস্রাবের অসুবিধা হতে পারে। * এ রোগের শুরুতে রোগীদের মনে হয় পায়ুপথ ভরা ভরা লাগে এবং ভেতরে কোনো চাকা বা মাংসের দলা রয়েছে বলে মনে হয় এবং অনেকক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে সমস্যা আরও বেশি মনে হয়।
* মলত্যাগ করতে কিছুটা বাধা লাগে।
* পায়খানা করার পর পেট ক্লিয়ার হয়নি বলে মনে হয় এবং আঙুল দিয়ে পায়খানা করতে হয়।
* কারও কারও মলদ্বারের চতুর্দিকে ব্যাথা হয় যা নিতম্ব অথবা পায়ের দিকে বিস্তৃত হতে পারে।

চিকিৎসা
আংশিক যে ক্ষেত্রে মিউকাস ঝিল্লি ঝুলে পড়ে এবং সম্পূর্ণ সে ক্ষেত্রে পায়ুপথের প্রাচীরের সব স্তরসহ ঝুলে পড়ে। প্রোল্যাপস যে প্রকারেরই হোক এর চিকিৎসা অপারেশন। তবে কোনো রোগী যদি চিকিৎসার জন্য অনুপযুক্ত বিবেচিত হন বা অপারেশন করতে রাজি না হন, তাহলে কিছু রক্ষণশীল পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেমনÑ মলত্যাগের সময় মলদ্বার হাত দিয়ে চেপে উপরের দিকে রাখতে হয়, নিতম্ব দু’টিকে টেপ দিয়ে আটকে রাখা, মলদ্বারের মাংসপেশির ব্যায়াম, রিং লাইগেশন পদ্ধতি ইত্যাদি।

অপারেশন পদ্ধতি: এ রোগের চিকিৎসায় অনেক ধরনের অপারেশন পদ্ধতি চালু রয়েছে। কোনো কোনোটি মলদ্বারে করতে হয় আবার কোনো কোনোটি পেট কেটে করতে হয়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, এ.কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা।
যোগাযোগ: ০১৭১২৯৬৫০০৯