শীতে বাড়ে পা ফাটার প্রকোপ

অনেকেরই একটি ভুল ধারণা শুধু শীতকালেই আমাদের পা কিংবা পায়ের গোড়ালি ফাটে। আসলে বছরের যেকোনো সময় এটা ঘটতে পারে। তবে শীতকালে কিছু কারণে পা ফাটার প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। পা ফেটে গেলে শুরুতে কিছু ঘরোয়া উপায়ে আপনি পরিত্রাণ পেতে পারেন। তবে জেনেটিক ও যাদের সারা বছরই পা ফেটে থাকে তাদের চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। এই সমস্যা প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশু উভয় ক্ষেত্রেই হতে পারে এবং এটি পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের ক্ষেত্রেই বেশি হয় বলে দেখা যায়। যখন আপনার হিলের চারপাশের ত্বক শুষ্ক এবং মোটা হয়ে যায় তখন হিলের বা গোড়ালির নিচে ফ্যাট প্যাডের উপর চাপ বাড়ার কারণে হিল ফাটতে পারে। স্থ্থূলত্ব ও বেশ কয়েকটি কারণে যেমন হিল খোলা স্যান্ডেল পরা, শুষ্ক ত্বকের কারণে হিল ফাটা বেড়ে যেতে পারে। বেশির ভাগ মানুষের জন্য, পা ফাটা তেমন গুরুতর নয়। খালি পায়ে হাঁটার সময় কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে, হিলের ফাটলগুলো খুব গভীর হয়ে যায় এবং ব্যথা হতে পারে। ফাটা অংশে ময়লা জমে থাকলে ইনফেকশন, চুলকানি হতে পারে।
পা ফাটার সাধারণ কারণ

* রাস্তার ধুলাবালির প্রভাব। * শরীরে ক্যালসিয়াম, জিংক ও আয়রনের ঘাটতি হলে। * বেশি গরম পানিতে গোসল, অপরিচ্ছন্নতা এবং নোংরা জুতা পরিধান করলে। * ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের আর্দ্রতা কমার কারণে পা ফাটে। * জেনেটিক কারণেও পা ফাটে। হয়তো মা-বাবা, চাচা, ফফুদের পা ফাটা সমস্যা থাকলে পর্যায়ক্রমে এটা চলে আসে।

গোড়ালি ফাটার কারণ

গোড়ালি বা হিল ফাটার প্রথম লক্ষণটি হচ্ছে হিলের পাতার চারপাশে শুকনো, ঘন হওয়া ত্বকের অঞ্চল রয়েছে যা কলাউস হিসেবে পরিচিত। চলতে চলতে আপনার হিলের নিচে ফ্যাট প্যাড প্রসারিত হয়। এরফলে আপনার কলাউসগুলো ফেটে যায়।

পায়ের তলা ফাটার কারণ

* দীর্ঘ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা। * খালি পায়ে, বা খোলা ব্যাক স্যান্ডেল পরে ঘুরে বেড়ানো। * দীর্ঘক্ষণ গরম পানিতে গোসল করা। * অধিক ক্ষারসমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করলে তা আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে ফেলে ত্বক শুষ্ক করে ফেলতে পারে। * জুতা যদি আপনার পায়ে সঠিকভাবে ফিট না হয়। * আবহাওয়ার কারণে শুষ্ক ত্বক, যেমন ঠাণ্ডা তাপমাত্রা বা কম আর্দ্রতা। * যদি নিয়মিত আপনার পা ময়েশ্চারাইজ না করেন তবে পায়ের তলা দ্রুত শুকিয়ে ফেটে যেতে পারে।

পা ফাটার শারীরিক কারণসমূহ

ডায়াবেটিসের ফলে রক্তে উচ্চ শর্করা এবং দুর্বল সঞ্চালন শুষ্ক ত্বকের সাধারণ কারণ। ক্ষতিগ্রস্ত নার্ভের কার্বনে আপনি আপনার পায়ের শুষ্কতা এবং ফাটল সম্পর্কে অনাবগত থাকতে পারেন

পা ফাটার অন্যান্য কারণগুলো হচ্ছে-

* ভিটামিনের ঘাটতি। * ছত্রাক সংক্রমণ। * হাইপোথাইরয়েডিজম * আটোপিক ডারমাটাইটিস। * কিশোর প্লান্টার ডার্মাটোসিস * সোরিয়াসিস। * পামোপ্ল্যান্টার ।

কেরোটোডার্মা, পায়ের ত্বক অস্বাভাবিক ঘন হয়ে যাওয়া

* মোটা শরীর; * গর্ভাবস্থা; * বার্ধক্য; পা ফাটার চিকিৎসা অনেকেই নিতে চান না। অনেকে মনে করেন যেকোনো ঘরোয়া প্রতিরোধেই পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। কিন্ত দেখা যায়, বেশ জটিল ও বিব্রতকর হলে অনেকে চিকিৎসকের কাছে শরণাপন্ন হন। মনে রাখবেন যে অন লাইনে পাওয়া অনেক ধরনের পা ফাটার সমাধানের পেছনে ভালো কোনো প্রতিকার নাই।

ফাটা পায়ের কিছু ঘরোয়া করণীয়

* হিল বাম ব্যবহার: পা ফাটার প্রথম চিকিৎসা হলো হিল বাম কিংবা ঘন ময়েশ্চারাইজারকে। এই বামগুলোতে পায়ের মৃত ত্বককে নরম এবং উদ্বেলিত করার উপাদান রয়েছে। নিম্নলিখিত উপাদানগুলো বাজার থেকে কিনে ব্যবহার করতে পারেন। ইউরিয়া (ফ্লেক্সিটল হিল বাল্ম) স্যালিসিলিক অ্যাসিড (কেরাল) আলফা -হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (অ্যাম্ব্যাকটিন) স্যাকারাইড আইসোমেরেইট * পা ফাটা সমস্যায় দিনের শুরুতে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য সকালে হিল বাম প্রয়োগ করুন। * দিনে ২ থেকে ৩ বার আপনার হিলটি ময়েশ্চারাইজ করুন। * গোড়ালি রক্ষা করে বা ভালো করে ঢেকে রাখে এমন জুতা পরুন। * কিছু কিছু হিল বামের কারণে ত্বকে সামান্য জ্বালাপোড়া হতে পারে। চিন্তার কিছু নেই, এটি সাধারণ একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যদি বাম আপনাকে বিরক্ত করে বা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ফাটা হিলগুলোর গুরুতর প্রদাহ কমাতে এবং চুলকানি উপশম করতে স্টেরয়েড ক্রিমের প্রয়োজন হতে পারে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অন্য ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।

নিজেই করি প্রতিরোধ

* সব সময় পরিচ্ছন্ন থাকুন, পা স্ক্রাব করুন। * একমগ হালকা কুসম গরম পানিতে এককাপ মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ পায়ে ম্যাসাজ করুন । কুড়ি মিনিট পরে পা-ঘষার পাথর দিয়ে শক্ত চামড়া ঘষে পরিষ্কার করে দিন। অলিভ অয়েল, তিলের তেল, নারিকেল তেল, সরষের তেল ও বাদাম তেল পা ফাটার ভালো একটি সমাধান। রাতে যেকোনো একটি তেল মাখিয়ে ঘুমোতে যাবেন। ভালো ফল পেতে পারেন।

লেখক: হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (চর্ম যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ), সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা । চেম্বার: কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার বিটিআই সেন্টার গ্রান্ড, (২য় তলা) ফার্মগেট, গ্রিন রোড, ঢাকা। প্রয়োজনে: ০১৭১১৪৪০৫৫৮।