জলবায়ু-বাস্তুচ্যুতিতে বাড়ছে মানবপাচার

বাংলাদেশে জলবায়ু-উদ্বাস্তুরা অহরহ পাচারের শিকার হচ্ছেন- এমনটাই দাবি মানবপাচার বিষয়ক জাতিসংঘ রিপোর্ট-২০২২ এ। উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, সুন্দরবন অঞ্চলে মানবপাচারকারীরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। ওই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে রয়েছেন অনেকেই। সেই ঝুঁকি মোকাবিলা এবং সুস্থ-সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রামরত মানুষদের নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে পাচারকারীরা। অনেকে প্রলুব্ধ হচ্ছেন না বুঝে!

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয় ইউএনওডিসি তাদের ২০২২ সালের বৈশ্বিক রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে। যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ পাবে। ইউএনওডিসির মানবপাচার প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশে সাইক্লোন ও ঘূর্ণিঝড়’ শিরোনামে বাংলাদেশ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, জাতিসংঘ যে সব তথ্য সংগ্রহ করেছে তার মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন অঞ্চল থেকে বেশি মানুষ পাচারের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চল নিয়ে অবস্থিত সুন্দরবনকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিপর্যয়ের হটস্পট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, সুন্দরবন অঞ্চলে কিছুদিন পরপর বন্যা ও সাইক্লোনের কারণে ফসল ও সম্পদের ক্ষতি হয়ে থাকে।

যার ফলে এ অঞ্চলের ৪৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী ২০১৪ সাল থেকে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। ঋণে জর্জরিত হয়ে মৎস্যশিল্প এবং কারখানাগুলোতে জোরপূর্বক শ্রম দিতে হচ্ছে অনেককে। কিছু ক্ষেত্রে শিশুদেরও শ্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি এতো ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে, তা মানবপাচারকারীদের সুযোগ করে দিয়েছে এ সব ঋণগ্রস্ত ও নিম্নআয়ের মানুষগুলোকে পাচার করার। ফলে পাচারকারীরা বড় নিয়োগ অভিযান চালায় এসব ঋণগ্রস্ত নিম্নআয়ের দুর্বল মানুষগুলোর মধ্যে। মানবপাচারকারীরা বেসরকারি ব্যবসা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সঙ্গে মিলে পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনা করে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা যখন উন্নত জীবনের খোঁজে যারা ঢাকা অথবা কলকাতায় আশ্রয় নেয়, তখনও তারা পাচারকারী রিক্রুটিং এজেন্ট লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় এবং শোষণের শিকার হয়।