অটিজম সন্তানের অভিভাবকগণ কেন এত আতঙ্কিত

অটিজম শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ধরেই নেই এর কোনো চিকিৎসা নাই। কারণ এর চিকিৎসার বিষয়ে অভিভাবকগণের নিকট ভালো কোনো তথ্য নাই। এদের জন্য অটিজম স্কুল, কিছু থেরাপি এবং বাসায় আসলে বিরক্তকর পরিবেশ এটাই এদের জীবন। অটিজম সন্তানের কারণে পরিবারে অনেক অসুবিধা হয়। সন্তানকে লালন-পালনের জন্য কর্মজীবী মায়েদের কর্ম ছেড়ে দেয়া, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারেন না, সকল সময়ে মানসিক কষ্টের মধ্যে থাকা ইত্যাদি। তারা বড় হলে তাদের জীবন-যাপন, লেখাপড়া, চিকিৎসাসেবা আরেক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে। সবশেষে অভিভাবকগণ ভাবেন আমরা না থাকলে এদের কি হবে? অটিজম সন্তান ও অভিভাবকদের জীবন-যাপন স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতেই আজকের আলোচনা।
অটিজমে ব্রেনে কী ঘটে?
সাধারণের বুঝার সুবিধার্থে আমরা ব্রেনকে যদি কম্পিউটারের হার্ডওয়ার এবং অটিজম শিশুর আচরণ ও কাজকর্মকে যদি আউটপুটের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে দেখতে পাই এদের হার্ডওয়ার পরিপূর্ণ ডেভেলপ হয়নি ফলে, প্রোগ্রামিং সফটওয়ার সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। ফলাফল: সঠিক আউটপুট আসছে না। অর্থাৎ, ব্রেনের নিউরোনসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে না পারার কারণে শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। ব্রেন ডেভেলপ হয়ে পরিপূর্ণতা পেলে ব্রেনের নিউরোনসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারলে শিশুর আচরণ, কথাবার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে।
অটিজম সন্তানের অভিভাবকগণ কেন এত আতঙ্কিত?
অটিজম সন্তানের অভিভাবকদের আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিউরো ডেভেলপমেন্টের (অটিজমের) কার্যকরী কোনো ওষুধ নাই। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি অর্থাৎ হোমিওপ্যাথিতে কার্যকরী ওষুধ থাকলেও অটিজম বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসক নাই বললেই চলে। যারা আছেন তাদের চিকিৎসার কোনো প্রচার নাই। ফলে, অভিভাবকগণ তাদের তথ্য না জানার কারণে ধরেই নিয়েছেন যে, এদের কোনো চিকিৎসা নাই। এ কারণেই অভিভাবকগণ এদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই আতঙ্কিত হন।
অভিভাবকগণের করণীয়:
আপনার শিশু অটিজমে আক্রান্ত শুনে ভেঙে পড়বেন না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে শান্তভাবে করণীয় সম্পর্কে চিন্তা করুন। শিশুর সমস্যাগুলো শনাক্ত করুন। এ ধরনের শিশুর অভিভাবকদের সঙ্গে পরিচয় থাকলে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এদের মধ্যে যদি কারও সন্তানের উন্নতি হয়েছে বলে জানতে পারেন তাহলে কোথা থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন? কোথা থেকে থেরাপি নিচ্ছেন? কোথায় লেখাপড়া করে? খাবারের রুটিন কি? এ সকল তথ্যসমূহ জেনে নিন। যদি কারও সন্তান হাইপার থাকে তাহলে তার বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করুন। বহুবিধ অসুবিধার মধ্যেও আপনার সন্তানের চিকিৎসার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।
চিকিৎসা:
হোমিওপ্যাথিতে অটিজম শিশুদের ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে। নির্ভরযোগ্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাসেবা থাকতে শিশুকে বিনা চিকিৎসায় রাখা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? ‘অটিস্টিক শিশুদের’ সমস্যা যেহেতু ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার’ সেহেতু প্রয়োজন ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট’ চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। চিকিৎসা শুরুর পর রোগীর মানসিক উন্নতি হলে, পূর্বের তুলনায় মনোযোগী এবং নিজের কাজ নিজে করার আগ্রহ তৈরি হলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। তবে, একথা স্মরণ রাখতে হবে এই পরিবর্তন প্রথমদিকে ধীরে-ধীরে হয়। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলামুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় আমি রোগীর ‘মায়াজমের’ দিকে খেয়াল রেখে প্রধানত: থুজা, মেডোরিনাম, সিফিলিনাম, টিউবারকুলিনাম, কার্সিনোসিন, হাইড্রোফোবিনাম, সোরিনাম, সালফার, ক্যালকেরিয়া-কার্ব, ক্যালকেরিয়া-ফস, ন্যাট্রাম-মিউর, ন্যাট্রাম-সালফ ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করি। এ ছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ব্যায়াম শিখিয়ে দেই যা মস্তিষ্কের নিউরোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হয়। অটিজম সন্তান ও অভিভাবকদের আতঙ্ক কাটিয়ে জীবন-যাপন স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।

লেখক: পিএইচডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। জটিল ও দুরারোগ্য রোগীর অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষক।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্র্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০৩১০