চীনে বেড সংকট, স্ট্রেচারে রোগী, হুইলচেয়ারে নিচ্ছেন অক্সিজেন

চীনে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। রাজধানী হাসপাতালে বিছানা সংকট দেখা দিয়েছে। তারপরও প্রতিনিয়ত রোগী যাচ্ছেন হাসপাতালে। তাদের বেশির ভাগই বয়স্ক। হাসপাতালের হলওয়ে বা চলার পথে স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখা হয়েছে তাদের। কেউবা হুইলচেয়ারে বসে অক্সিজেন নিচ্ছেন। এ দৃশ্য রাজধানী বেইজিংয়ে। শহরটির পূর্ব দিকে অবস্থিত দ্য চুইয়াংলিউ হাসপাতালে বৃহস্পতিবারও নতুন নতুন রোগী যাচ্ছিলেন। দুপুরের আগেই বিছানা সংকট দেখা দেয়। এ অবস্থায়ও এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন রোগী।

চীন সরকারের তরফ থেকে প্রকৃত কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের এহেন পদক্ষেপে বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরোস আধানম ঘ্রেব্রেয়েসাস। ওদিকে ভারতে ওমিক্রনের সবগুলো সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিদ্যমান। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনার মুখে বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, অব্যাহতভাবে উন্মুক্তভাবে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তথ্য ও ডাটা শেয়ার করে যাচ্ছে বেইজিং। তিনি আরও বলেছেন, বর্তমানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে চীনে। তার ভাষায়, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারিতে ইতিবাচক, পক্ষপাতিত্বহীন থাকবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমরা সেই আশা করি। তারা বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদক্ষেপ নেবেন বলেও তিনি আশা করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ২০২৩ সালের শুরুতে চীনে নতুন করে ২ লাখ ১৮ হাজার ১৯ জন রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে চীন রিপোর্ট দিয়েছে। মঙ্গলবার সেখানে করোনা সংক্রান্ত রোগে মারা গেছেন কমপক্ষে ৫ জন। এ নিয়ে সরকারি হিসাব মতে, চীনে এ রোগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫,২৫৮ জন। বৈশ্বিক মানদণ্ডে এ সংখ্যা খুবই কম। ওদিকে ভারতে এখন ওমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সবটাই বিদ্যমান। গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ভারতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৮ জন। ১২৪টি পজেটিভ নমুনার মধ্যে ৪০ জনের জিনোম সিকুয়েন্সিং করে ১৪টি নমুনায় পাওয়া গেছে এক্সবিবি.১ সহ এক্সবিবি সাব-ভ্যারিয়েন্ট। একটি নমুনায় পাওয়া গেছে বিএফ ৭.৪.১। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফেরত আসা চারজনের শরীরে বিএফ.৭ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিনজনই এক পরিবারের। এই সাবভ্যারিয়েন্টটি সম্প্রতি চীনসহ কিছু দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একে দায়ী করা হয়। ভারতের ওই ব্যক্তিরা সফর শেষে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কলকাতা ফিরেছেন। এখন তারা সবাই করোনা নেগেটিভ। তাদেরকে হাসপাতালে যেতে হয়নি। তাদের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন যারা, তাদের কারো পজেটিভ পাওয়া যায়নি।

এরই মধ্যে চীনে করোনা বিস্তারের খবরে চীন থেকে যাওয়া সফরকারীদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন দেশ। তারমধ্যে সর্বপ্রথম এমন বিধিনিষেধ আরোপ করে ইতালি। তাতে বলা হয় চীন থেকে যাওয়া সব যাত্রীর করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। এর পরপরই ফ্রান্স ও স্পেন তাদের নিজেদের মতো করে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর চীনে করোনা ইস্যুতে গৃহীত পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কমপক্ষে এক ডজন দেশ চীন থেকে যাওয়া ভ্রমণকারীদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করে। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম।

বিশেষ করে গত মাসে চীন তার করোনা নিয়ন্ত্রণের কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেয়। এরপর সেখানে সংক্রমণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালগুলো ভরে যাচ্ছে রোগীতে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার স্থানগুলোতে ভিড় লেগে গেছে। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সি পরিচালক মাইক রায়ান মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বুধবার বলেছেন, চীন থেকে বর্তমানে যে সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে, তা হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা, আইসিইউতে রোগী এবং মৃত্যু সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। ফলে টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, সংক্রমণ ইস্যুতে অধিকতর তথ্য শেয়ারের গুরুত্ব তুলে ধরে সম্প্রতি চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এতে হাসপাতালে করোনার হার, জেনেটিক সিকুয়েন্সিং সহ সব তথ্য শেয়ার করার অনুরোধ করা হয়েছে।

সম্প্রতি করোনা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের ফলে চীনের প্রেসিডেন্ট আকস্মিকভাবে ‘জিরো-কোভিড’ নীতি শিথিল করার ঘোষণা দেন। কারণ, তিনি মনে করেন, এই বিধিনিষেধের ফলে তার দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে দুর্বল হচ্ছে। এ কথা জানিয়ে নিক্কেই এশিয়াতে জেমস স্টেন্ট লিখেছেন, কমিউনিস্ট পার্টি বুঝতে পেরেছে যে, দেশ যদি কঠোর বিধিনিষেধের অধীনে যায় তাহলে তাতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক হতাশা বৃদ্ধি পাবে। ফলে তুলে নেয়া হয়েছে এই বিধিনিষেধ।