ভারতকে কাঁপিয়ে হার টাইগারদের

পুঁজিটা বড় ছিল না। তবে বোলারদের নৈপুণ্যে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। সকালে ৭ ওভারের মধ্যেই ভারতের ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিল টাইগাররা। এতে ম্যাচের চতুর্থ দিনের প্রথম ঘণ্টায় ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৪/৭-এ। অবশিষ্ট তিন উইকেটে সফরকারীদের জয়ের জন্য তখনও দরকার ৭১ রানের। কিন্তু এরপর সাকিব-মিরাজদের মুঠো থেকে ম্যাচে কেড়ে নেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন-শ্রেয়াস আইয়ার জুটি। শেষ পর্যন্ত তুমুল লড়াই শেষে তিন উইকেটে হেরে যায় সাকিব আল হাসানের দল। এতে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় ভারত। অষ্টম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৭১ রানের জুটি গড়েন অশ্বিন-শ্রেয়াস। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে ভারতের এটি সর্বোচ্চ জুটি।

১ রানে জীবন পাওয়া অশ্বিন অপরাজিত থাকেন ৪২ রানে। বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করে ভারতের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয় এটি।মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে মেহেদী হাসান মিরাজের করা দিনের তৃতীয় বলেই হয় প্রথম রিভিউ। ব্যাট-প্যাড একসঙ্গে রেখে ডিফেন্ড করতে গিয়েছিলেন নাইটওয়াচম্যান জয়দেব উনাডকাট। ব্যাটের আগে প্যাডেই লেগেছিল বল, তবে অল্পের জন্য হয় আম্পায়ার্স কল। ঠিক পরের বলেই ছক্কা মেরে বাংলাদেশের হতাশা বাড়ালেও উনাদকাট অবশ্য এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি। পরের ওভারে সাকিবকে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে হন এলবিডব্লিউ। ক্রিজে আসেন ঋষভ পন্ত, যাঁর দিকে অনেকটাই তাকিয়ে ছিল ভারত। সীমানার ওপর যান পাঁচজন ফিল্ডার। সাকিবকে রিভার্স সুইপ করে নিজের সহজাত খেলাও শুরু করেন পন্ত। কিন্তু এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের সঙ্গে লড়াইটা জেতেন মিরাজই। জোরের ওপর করা বলটিতে সামনে ঝুঁকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে পরাস্ত হন। এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন পন্ত। পরের ওভারে এসে মিরাজ নেন ইনিংসের পঞ্চম উইকেট। এবার তাঁর শিকার অক্ষর প্যাটেল। পেছনের পায়ে ভর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, তবে নিচু হওয়া বলটির নাগাল পাননি। অক্ষরের প্যাডে লেগে বল আঘাত করে স্টাম্পে। আউট হওয়ার আগে ৩৪ রান করেন ভারতীয় স্পিন-অলরাউন্ডার। মিরাজ পেয়ে যেতে পারতেন ষষ্ঠ উইকেটটিও, তবে শর্ট লেগে ওঠা অশ্বিনের ক্যাচ নিতে পারেননি মুমিনুল। আগেরদিন এ পজিশনেই কোহলির দারুণ একটি ক্যাচ নিয়েছিলেন তিনি। অশ্বিনের ক্যাচ পড়ার সময় শর্ট মিডউইকেটে থাকা সাকিব আফসোসে প্রায় শুয়েই পড়েন! অশ্বিন তখন ব্যাটিং করছিলেন ১ রানে, ভারতের প্রয়োজন ছিল ৬৫ রান। শেষ পর্যন্ত আর কোনো সুযোগ দেননি ভারতীয়রা। টেস্টে মিরাজ পাঁচ বা তার বেশি উইকেট পেলেন নবমবার। টাইগার অফস্পিনার শেষবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন প্রায় দেড় বছর আগে, ২০২১ সালের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে। সম্ভাবনা জাগিয়েও ম্যাচ হেরে যাওয়ায় দলের বাকিদের মতো হতাশা ছিল মেহেদী হাসান মিরাজেরও। তবে ভারতীয় তারকা বিরাট কোহলির উপহার পেয়ে মিরাজের মুখে হাসি ফোটে। জার্সিটা ছিল ভারতের ওয়ানডে দলের, যার পেছনের অংশে নিজের অটোগ্রাফ দিয়ে কোহলি লিখেছেন, ‘মেহেদীর জন্য শুভ কামনা’ জার্সি উপহার দেওয়ার সময় মিরাজের সঙ্গে নাকি মজাও করেছেন কোহলি। মিরাজ বলেন, ‘আমিই তার কাছে চেয়েছিলাম একটি জার্সি। তার মতো গ্রেট ব্যাটসম্যানের একটি জার্সি নিজের সংগ্রহে রাখতে পারা বড় ব্যাপার। আজ তিনি ডেকে নিয়ে জার্সি দিলেন। তিনি মজা করে বলেছেন, ‘আমাকে আউট করে আমার কাছ থেকে জার্সি নিয়ে যাচ্ছিস!’ জার্সিটা ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সময়ই চেয়েছিলেন মিরাজ। টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হারলেও ওয়ানডে সিরিজ ২-১ এ জিতেছিল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম দুই ওয়ানডে ম্যাচে মিরাজই ছিলেন বাংলাদেশের জয়ের নায়ক। পরে তিনি কুড়ান ম্যান অব দ্য সিরিজ ট্রফিও।
বাংলাদেশের বিপক্ষে হার থেকে শিক্ষা নিচ্ছে ভারত

সকালে প্রথম আধা ঘণ্টার মধ্যেই ৩ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় ভারত। সে সময় ভারতের ড্রেসিংরুমেও চাপ আর নার্ভাসনেস টের পাচ্ছিলেন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশ ভারতকে নিয়মিত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল বলেও মনে করেন রাহুল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ভারত দলের অধিনায়ক কেএল রাহুল বলেন, ‘কঠিন ম্যাচ, খুশি যে কাজ শেষ করতে পেরেছি। আমরা ঝামেলায় ছিলাম, ড্রেসিংরুমে চাপ আর নার্ভাসনেসও ছিল। অশ্বিন ও শ্রেয়াসের জুটিতে জয় পাওয়াতে আসলেই অনেক খুশি।’ রাহুল বলেন, ‘কন্ডিশন কঠিন ছিল, টেস্ট ক্রিকেটের মজাটাই এখানে। যখন কন্ডিশন কঠিন, তখনই আপনার চারিত্রিক দৃঢ়তা বোঝা যাবে। আমরা এভাবে ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করি। কঠিন ম্যাচ, তবে এটিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জয়টাও তাই মধুর হয়েই থাকবে।’ বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হার থেকে পাওয়া শিক্ষা নিজ দেশে আসন্ন বিশ্বকাপে ভারতের কাজে লাগবে বলে মনে করেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘সত্যিই ভালো সিরিজ। দারুণ অভিজ্ঞতা, অনেক কিছু শেখার ছিল। অবশ্যই ওয়ানডে সিরিজ হারটা তেমন সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। তবে সিরিজ হারও আপনাকে অনেক কিছু শেখায়, বিশেষ করে ব্যক্তিগত ও দলীয় দিক দিয়ে আপনার অবস্থানটা কোথায় আর এটা ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের প্রশংসাই করলেন তিনি। রাহুল বলেন ‘টেস্ট সিরিজেও কঠিন লড়াই হয়েছে। বাংলাদেশ সত্যিই খুব খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে। আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এমনকি আজও। সিরিজের শেষটাও দারুণ হলো। তারা আমাদের কাজটা কঠিন করে তুলেছিল। প্রথম ৩০-৩২ ওভারে তো ম্যাচ তাদের হাতেই ছিল। অশ্বিন ও শ্রেয়াস এগিয়ে এসে আমাদের কাজটা শেষ করেছে।’