জানাজায় ডাণ্ডাবেড়ি পরানো সংবিধান ও মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী

প্যারোলে মুক্তি পাওয়া ছেলেকে মায়ের জানাজায় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাজির করা সংবিধান ও মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি। কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাইদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। কমিশন বলছে, একজন বন্দিকে মায়ের জানাজায় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া কেবল অমানবিকই নয়, এটা বাংলাদেশের সংবিধান ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি। এতে বলা হয়, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আলী আজমের মা সাহেরা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে গত ১৮ই ডিসেম্বর মারা যান। শেষবার মায়ের মরদেহ দেখতে ও জানাজায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেতে আইনজীবীর মাধ্যমে ১৯শে ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। ২০শে ডিসেম্বর তিন ঘণ্টার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি তার মায়ের জানাজায় উপস্থিত থাকার সুযোগ পান। প্যারোলের পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন তিনি। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জানাজা পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি খুলে দেয়ার অনুরোধ করা হলেও তা খুলে দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

কমিশন মনে করে, ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনপূর্বক প্যারোলে মুক্তি দেয়ার পরও একজন বন্দিকে মায়ের জানাজায় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া কেবল অমানবিকই নয় বরং বাংলাদেশের সংবিধান ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বা দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানসিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেয়া যাবে না। কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাশাপাশি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো বিষয়ক উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটা এক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েনসহ যথাযথ নজরদারিসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া সমীচীন ছিল। কিন্তু মায়ের জানাজায় ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে অংশগ্রহণ অত্যন্ত অমানবিক। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণে যত্নবান হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দিচ্ছে কমিশন।