রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে কেউ নিরাপদ নয়: মার্কিন কংগ্রেসে জেলেনস্কি

বিশ্বের কোনো দেশই ‘রাশিয়ার আগ্রাসন’ থেকে নিরাপদ নয়। বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এতে তিনি বলেন, আগামী বছরই যুদ্ধের একটি টার্নিং পয়েন্ট আসতে যাচ্ছে। এটাই নির্ধারণ করবে আমাদের সন্তান ও তাদের সন্তানরা কোন পৃথিবীতে বাস করবে। তাই এই যুদ্ধ থামিয়ে দেয়া যাবে না, একে অবহেলা করা যাবে না।

ফক্স নিউজের খবরে জানানো হয়েছে, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছে রিপাবলিকানরা। ইউক্রেন আশঙ্কা করছে, রিপাবলিকানদের অধীনে আগের মতো অস্ত্র সহায়তা পাওয়া কঠিন হবে তাদের জন্য। মূলত সেই প্রেক্ষাপটেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছেন জেলেনস্কি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সাবধান করে বলেন, বিশ্ব এখন নিজেদের মধ্যে আরও অনেক বেশি সংযুক্ত, দেশগুলো একে অপরের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল। এমন সময় যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ থেকে দূরে সরে গিয়ে নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারবে না। আপনাদের এই অর্থ কোনো দান নয়।

এটি ভবিষ্যতের বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং গণতন্ত্র নিশ্চিতের জন্য একটি বিনিয়োগ।
মার্কিন আইনপ্রনেতাদের উদ্দেশ্যে জেলেনস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তা শুধু ইউক্রেনের জয়ের জন্যই নয়। এটি প্রমাণ করবে যে, রাশিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলো চাইলেই অন্য দেশের সীমান্ত ভেঙে প্রবেশ করতে পারে না। ইউক্রেন কখনও বলেনি যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা পাঠাক। আমি আপনাদের নিশ্চিত করছি যে, ইউক্রেনের সেনারা যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাংক, বিমান খুব ভালোভাবেই চালাতে পারবে। আমাদের এখন আরও কামান ও গোলা দরকার। রাশিয়া চাইলে তাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে পারে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র পারে ইউক্রেনের জয় নিশ্চিত করতে।

রাশিয়ার আক্রমণের পর এই প্রথম দেশ ছেড়ে কোথাও গেলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তার এই সফর আচমকাই ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমের কাছেও কোনো খবর ছিল না। বুধবার ওয়াশিংটন গিয়ে পৌঁছান জেলেনস্কি। মার্কিন কংগ্রেসকে তিনি একটি ইউক্রেনের পতাকা উপহার দিয়েছেন। যেখানে ফ্রন্টলাইনের সেনাদের স্বাক্ষর রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেস উঠে দাঁড়িয়ে জেলেনস্কিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

বক্তৃতায় একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি। পাশাপাশি বলেছেন, ইউক্রেনকে হারানো সম্ভব নয়। ইউক্রেন সে কথা প্রমাণ করে দিয়েছে। জেলেনস্কির ভাষায়, ইউক্রেন কখনো আত্মসমর্পণ করবে না। ইউক্রেন জেগে আছে এবং লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন কংগ্রেসে বক্তৃতা করতে পেরে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন। প্রেসিডেন্টের দাবি, মানসিকভাবে রাশিয়াকে পরাজিত করেছে ইউক্রেন। রাশিয়া পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে।

দনেতস্কের আর্তেমোভস্ক শহর যা ইউক্রেনে বাখমুত নামে পরিচিত, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চলছে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সেনাদের মধ্যে। সেখানে ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ করা ইউক্রেনীয় সেনাদের স্বাক্ষর করা একটি জাতীয় পতাকা মার্কিন কংগ্রেসকে এদিন উপহার দিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে ইউক্রেনের মানুষকে স্বাধীনতা উপহার দেবেন তিনি। আমরা এবছরে ক্রিসমাস পালন করবো। হয়তো সব জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্রিসমাসের আনন্দ থেকে আমাদের কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।

এদিন জেলেনস্কিকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জেলেনস্কিকে তিনি একটি ১০ পয়েন্টের শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন। কীভাবে ইউক্রেন ঘুরে দাঁড়াবে, সে কথাই বলা আছে সেখানে। বাইডেন বলেছেন, ইউক্রনকে কখনো একা লড়তে হবে না। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় তার পাশে থাকবে। ভ্লাদিমির পুতিন এই যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বলে এদিন অভিযোগ করেছেন বাইডেন। দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই উন্নত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জেলেনস্কি। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব হয়েছে, সে কথা বলতে চাননি তিনি।

ইউক্রেনকে গত ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বন্যার পানির মতো অস্ত্র প্রবেশ করছে দেশটিতে। বিভিন্ন হিসেবে দেখা যাচ্ছে, এই যুদ্ধে রাশিয়ার থেকে ইউক্রেনের ব্যয় বেশি। নতুন করে আরও ৪৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাঠাতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সপ্তাহেই কংগ্রেসে উঠবে বিলটি। এরমধ্য দিয়ে গত ৯ মাসে ইউক্রেনকে দেয়া মার্কিন সহায়তা ১০০ বিলিয়ন ডলার পার হয়ে যাবে।