সিরিজ জয়ের আড়ালে ব্যাটিংয়ের ‘কালো মেঘ’

ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টানা দুই ম্যাচ জেতার পর ইতিহাস গড়ার সুযোগ এসেছিল। চট্টগ্রামের সাগরিকা স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ম্যাচ জিততে পারলেই প্রথমবার ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার রেকর্ড হতো। কিন্তু বিধিবাম! উল্টো রেকর্ড গড়ে জিতেছে বিশে^র অন্যতম শক্তিধর দলটি। প্রথমবারের মতো টাইগারদের বিপক্ষে ৪০৯ রানের রেকর্ড ইনিংস গড়ে। দুই ম্যাচ একাদশে সুযোগ না পাওয়া ইশান কিশান রেকর্ড বইয়ের পাতা উলটপালট করে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি করেন। অন্যদিকে জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ আবারো টপ অর্ডারের চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় গুটিয়ে যায় ১৮২ রানে। মেনে নেয় নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানে হারের লজ্জা। প্রথম দুটি ম্যাচে জিতলেও সেখানেও ছিল ব্যাটিং ব্যর্থতা। প্রথম ম্যাচে ১৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৩৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়েছিল টাইগাররা।

সেখান থেকে মেহেদী হাসান মিরাজ দলকে জয় উপহার দেন মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে। পরের ম্যাচে মাত্র ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল দল। সেখানে মিরাজ তার ম্যাজিক্যাল সেঞ্চুরিতে দলকে উদ্ধার করেন। তবে ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি হাতে নিয়ে হয়তো বাংলাদেশ বেমালুম ভুলে গেছে সেটি। টেস্ট সিরিজের আগে গতকাল সাগরিকায় অনুশীলনে গিয়েছিলেন শুধু মুশফিকুর রহীম ও স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ভারতের বিপক্ষেও যে চোখ রাঙাচ্ছে ব্যাটিং ব্যর্থতা ভুলে গেলে আরো বড় লজ্জায় পড়তে হবে সাকিব আল হাসানের দলকে। ওয়ানডে সিরিজ জিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন দাস খুশি হলেও তাদের খেলার ধরন নিয়ে মোটেও খুশি নয় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রথম দুই ম্যাচ জিতলেও প্রথম সারির ব্যাটাররা রান করতে পারেনি। তারপরও দুই একজন রান করে বিশেষত মিরাজ যে রানটা করেছে, তার জন্য জিততে পেরেছি। বোলিং খুব ভালো হয়েছিল। আমরা জানি ভারতের ব্যাটিং কত শক্তিশালী।’
বিসিবি সভাপতি খুশি হতে পারেননি তার কারণও আছে। ব্যাটিং উইকেটেও টাইগারদের যে ব্যাটিং ব্যর্থতা তা নিয়ে আশা জাগানোর মতো কিছু নেই। তিনি শুধু ব্যাটিংই নয় প্রশ্ন তুলেছেন টাইগারদের জেতার মনোভাব নিয়েও। পাপন বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে যে ধরনের উইকেট ছিল, অনেক রান হওয়ার মতো। আসলে এ ধরনের উইকেট আমরা সচরাচর দেখি না। বাংলাদেশে কখনো দেখিনি, সাধারণত আরও স্পোর্টিং উইকেট দেখি। হয় পেসকে সাহায্য করবে, নয়তো স্পিনকে। কিন্তু এটা মোটামুটি ফ্ল্যাট ছিল। সেক্ষেত্রে প্রথমে ব্যাট নিলে ভালো হতো। তবে নিলেই যে বিরাট কিছু হয়ে যেতো, সেটা বলছি না। কিন্তু যে জিনিসটা হয়েছে, কোহলি ও ইশানের দুটি অসাধারণ ইনিংসের পর স্কোর এমন জায়গায় গিয়েছে আমরা মনে হয় সেখান থেকে ম্যাচটা হেরে গেছি বা ছেড়ে দিয়েছি। জিততে হবে বা জিতবো এমন অ্যাপ্রোচ ছিল না।’ ১৪ই ডিসেম্বর থেকে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়াবে চট্টগ্রামের সাগরিকা স্টেডিয়ামে। টাইগারদের টেস্ট রেকর্ড ২২ বছরেও তেমন উন্নতি হয়নি। বরারবরই বিসিবি সভাপতি স্বীকার করে নিয়েছেন টেস্টে বাংলাদেশ ভালো দল নয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ ভারত টেস্টে কতটা শক্তিশালী তা ভালো করেই জানা আছে টাইগারদের। এখন পর্যন্ত তাদের বিপক্ষে ৭ সিরিজে মাত্র একটি ড্র করেছে বাংলাদেশ। বাকি সবকটিতে মিলেছে হার। ২০১৫ তে সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি ফতুল্লায় বৃষ্টির কারণে ড্র হয়। সবশেষ দুটি টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে দল। ২০১৭ তে হায়দরাবাদে এক মাত্র টেস্ট হারে টাইগাররা। পরে ২০১৯-এ ভারত সফরে ২-০ তে সিরিজ হারে মুমিনুল হক সৌরভের দল। ২০২১ এ ৭টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। সেখানে মাত্র একটি ড্র করেছে। বাকি সব হার। বলার অপেক্ষা রাখে না অতীত ও বর্তমান টেস্ট রেকর্ড বলছে ভারতের সঙ্গে দেশের মাটিতেও আরেকটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বাংলাদেশ। যেখানে দলের ব্যাটিং সামর্থ্য আবারো মুখোমুখি হতে পারে প্রশ্নের!