শীতে বাতের ব্যথা বেড়ে গেলে

বার্ধক্যজনিত ও বয়স বেড়ে গেলেই বাতের ব্যথায় আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি অল্পবয়সী মানুষের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে আজকাল। মনে করা হয় শীতকালে কায়িক শ্রম কমে যাওয়া ও আলস্যতার কারণে এ রোগটির প্রকোপ বাড়ে। তবে শীতের শুরুতেই বাত ব্যথা রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে একটু সচেতন হলে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে আমাদের দেহের অভ্যন্তরে রয়েছে এক বিশেষ রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ইমিউন সিস্টেম’। রোগশোকের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে এই সিস্টেম। কিন্তু অনেক সময় তা আবার শরীরের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে। হঠাৎ আক্রমণ করে শরীরের গিঁট, মাংসপেশিসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। কিন্তু ঠিক কী কারণে এই বিদ্রোহ, তা এখনো জানা যায়নি। আর এই বিদ্রোহের প্রভাব নানা বাত-ব্যথা- বেদনা।

ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০০ রকমের বাত রোগ আছে।
কারণসমূহ
বাত রোগের সঠিক কারণ এখনো অজানা। এরপরও বিজ্ঞানীরা কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। যেমন-
* বংশগত বা জেনেটিক কারণ (সাধারণত ১০ থেকে ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে)।
* পরিবেশগত কারণ।
* হরমোনের প্রভাব।
* রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে। অনেক সময় থায়াজাইড, এসপিরিন, পাইরাজিনামাইড ইত্যাদি ওষুধেও ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়ে গাউট হতে পারে।
* ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব।
* উদ্বেগ, চিন্তা ইত্যাদি।

চিকিৎসা
বাতের ব্যথার রোগীদের শীতকালের জন্য আলাদা বা ভিন্ন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে ব্যথা অধিক বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। বাতের ব্যথার ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খেতে হয়। ব্যথানাশক ওষুধ খেলেও খেয়াল রাখতে হবে, যাতে হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস ইত্যাদি ভাইটাল অর্গানগুলোর ক্ষতি না হয়। মনে রাখতে হবে বাত ব্যথার রোগীরা কোনো ক্রমেই নিজের ইচ্ছায় ফার্মেসি থেকে কোনো ওষুধ কিনে সেবন করবেন না। এতে ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে।

প্রতিরোধ
কিছু উপায় রয়েছে, যাতে শীতকালেও ব্যথামুক্ত অথবা কম মাত্রার ব্যথা নিয়ে থাকা যায়। ফলে বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রেখেই দিনযাপন করা যায়।

স্বাভাবিক চলাফেরা ও ব্যায়াম
শুধু বাতের রোগীদের জন্য নয়, বরং সবার উচিত শীতকালে স্বাভাবিক কাজকর্ম একটু বেশি করা। লেপ-কম্বল-কাঁথা মুড়ি দিয়ে বেশিক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকা বা বেশির ভাগ সময় বসে থাকা পরিহার করা উচিত। অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে না থেকে হালকা হাঁটাহাঁটি করুন। নিয়মিত নির্দেশমাফিক হালকা ধরনের ব্যায়ামগুলো করুন। তবে ব্যথা বেড়ে গেলে ব্যায়াম বন্ধ রাখুন।

গরম পোশাক
শীতের সময় পর্যাপ্ত গরম পোশাকে আবৃত থাকা উচিত, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিরা বা মানুষগুলোকে শীতের সময় উষ্ণ রাখার চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য যথোপযুক্ত গরম কাপড় পরিধান করা শ্রেয়।

গরম পানি ব্যবহার
হালকা গরম পানিতে অজু-গোসল করুন। কুসুম গরম পানি পান করুন। গরম পানির সেঁক (ময়েস্ট হিট) আর্থ্রাইটিসের ব্যথার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবার ব্যথার জায়গায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট গরম বা ঠাণ্ডা সেঁক দিলেও আরাম মেলে।

ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ
ব্যথা প্রতিরোধে ভিটামিন ডি খুবই কার্যকরী। শীতে সূর্যালোক কম থাকায় ভিটামিন ‘ডি’-এর কিছুটা অভাব দেখা দেয়। তাই বেশি করে ভিটামিন ‘ডি’যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। আর ভিটামিন ‘ডি’ ডিফিসিয়েন্সি হলে পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে ভালো হয়, সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে ২০-৩০ মিনিটের মতো প্রতিদিন রোদ পোহাতে পারলে। কেননা, ভিটামিন ‘ডি’র ৮০ শতাংশের উৎস সূর্য।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন।