আয়াত হত্যার পরিকল্পনা হয় দেড়মাস আগে

ইপিজেডে ৫ বছরের শিশু আলীনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় আরও এক কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে হাজির করা হয়।

পরে আদালতে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরের বন্দরটিলা নয়ারহাট থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার কিশোর আয়াতের বাসার কাছে একটি হোটেলে কাজ করেন।

আদালতে জবানবন্দিতে ওই কিশোর জানায়, ওই কিশোর আয়াতদের ভবনের পাশে একটি হোটেলে কাজ করে। সেখানে আবীরের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব। আবীর বয়সে বড় হওয়ায় ভাই বলে ডাকতো। গত অক্টোবরের শুরুতে নগরের নেভী গেইট এলাকার দেওয়ালে বসে আড্ডা দিচ্ছিল দুইজন। এ সময় আবীর ওই কিশোরকে বলে, ভবন মালিক মনজুর হোসেনের নাতনি আয়াতকে অপহরণ করে হত্যা করবে। এরপর মুক্তিপণের টাকা নেবে মনজুর কাছ থেকে। তাকেও সঙ্গে থাকতে বলে। কিন্তু সে রাজি না হলে তখন কাউকে কিছু না জানাতে অনুরোধ করে আবীর। গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে আয়াতকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানতে পারে হোটেলে কাজ করার সময়। হোটেল থেকে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বের হলে আয়াতদের ভবনের বিপরীতে আইয়ুব ভবনের সামনে আবীরের সঙ্গে তার দেখা হয়। দুইজনে মিলে কলোনীর দিকে আয়াতকে খুঁজতে যায়। তখন আয়াতকে আবীর অপহরণের পরে হত্যা করে বলে ওই কিশোরকে জানায়।

এসময় আবীর আয়াতকে কিছু করেছে কিনা জানতে চায় ওই কিশোর। আবীর তাকে জানায়, আয়াতকে অপহরণ করে সে মেরে ফেলেছে। লাশ আকমল আলী রোডের পকেট গেইট এলাকায় তার মায়ের বাসায় আছে। আয়াতের দাদার কাছে দুয়েক দিন পর ২০ লাখ টাকা চাইবে। টাকা নেওয়ার সময় তাকেও থাকার প্রস্তাব দেয়। তাহলে তাকেও কিছু টাকা দেবে। ওই কিশোর তাতেও রাজী হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলেনি।

আদালতে জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর (পরিদর্শক) ইলিয়াস খান।

কিশোরের দেওয়া জবানবন্দির বরাতে ইলিয়াস খান জানান, শিশু আলীনা ইসলাম আয়াত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয় দেড়মাস আগে। অভিযুক্ত আবীর আলী গ্রেফতার কিশোর বন্ধুকে সে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। অপহরণ করে হত্যাকাণ্ডের পরও গ্রেফতার কিশোর বন্ধুর কাছে স্বীকার করেছিল সব।

জবানবন্দিতে ওই কিশোর আরও জানায়, আয়াতকে হত্যা করেছে শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই। ভয়ে আমি কাউকে কিছু বলিনি। কারণ আমার মনে হয়েছিল এখন এসব বললে মানুষ আমাকেও সন্দেহ করবে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সময়মতো আয়াতকে মেরে ফেলার ঘটনা সবাইকে বলে দিলে তার মরদেহের টুকরো করার আগে পাওয়া যেতো।

আয়াত হত্যায় অভিযুক্ত আবীর আলী নগরের ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা আজহারুল ইসলামের ছেলে। তাদের বাড়ি রংপুর জেলায়। শিশু আয়াতকে খুনের মামলায় তার সম্পৃক্ততার তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর গত ২৪ নভেম্বর রাতে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

এরপর একই মামলায় গত ২ ডিসেম্বর আবিরের বাবা ও মাকে গ্রেফতার করা হয়। শিশু আয়াতের হত্যার ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে নগরের ইপিজেড থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। গত ৩ ডিসেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে শিশু আলীনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণের পর হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আবীর আলী। ওই বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা যাবত ১৭ পৃষ্টার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আবীর আলী।