পেরোনিজ ডিজিজ সমাধানে এক্সট্রাকর্পোরাল শকওয়েভ থেরাপি ও পি-শট

পেরোনিজ ডিজিজ বা পুরুষাঙ্গ/লিঙ্গ বাঁকা হয়ে যাওয়া হলো একটি কানেকটিভ টিস্যু ডিসঅর্ডার। এ ক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গের নরম টিস্যুতে ফাইব্রাস প্ল্যাকের বৃদ্ধি ঘটে। প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে এক থেকে চারজনের এ সমস্যা হয়। বিশেষ করে লিঙ্গের টিউনিকা অ্যালবুজিনা অংশে ফাইব্রোসিং প্রক্রিয়া ঘটে। টিউনিকা অ্যালবুজিনো হলো একটি ফাইব্রাস, যা লিঙ্গের কর্পোরা কেভারনোসাকে ঢেকে রাখে। লিঙ্গের এ ধরনের সমস্যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় পেরোনিজ ডিজিজ বলা হয়। কখনো কখনো একে ফাইব্রাস কেভারোসাইটিস বলা হয়। এ পরিস্থিতিকে ইরেকটাইল টিস্যুর (কেভারনোসা) স্তরগুলোকে ফাইব্রাস স্কার টিস্যু তৈরি হয়।

কী কারণে পেরোনিজ ডিজিজ ঘটে?

যদিও পেরোনিজ ডিজিজের সঠিক কারণ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে এটা জানা যায়, লিঙ্গের কিছু অংশের স্বাভাবিক ইলাস্টিক টিস্যুর জায়গায় স্কার টিস্যু বা অস্থিস্থাপক টিস্যু তৈরি হলে এ অবস্থাটি ঘটে। স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে উত্থানের সময় লিঙ্গের ইলাস্টিক টিস্যু বিস্তৃত হয়ে লিঙ্গকে সাজাসুজি উত্থিত করে তোলে।

যেহেতু স্কার টিস্যু ইলাস্টিক বা স্থিতিস্থাপক নয় বরং শক্ত সেহেতু লিঙ্গের অন্যান্য অংশ বড় হওয়ার সময় এটা (স্কার টিস্যু) কঠিন থেকে যায়, ফল হিসেবেও লিঙ্গ বেঁকে যায়। যদি স্কার টিস্যু লিঙ্গের চারপাশে বিস্তৃত হয় তা হলে লিঙ্গটা একটা বোতলের গলার মতো দেখায় অথবা লিঙ্গ অনেক ছোট হয়ে যেতে পারে। এ কথা বিশ্বাস করা হয়, কিছু কারণে লিঙ্গ বাঁকা হতে পারে। এসব কারণে মধ্যে রয়েছে আঘাত, প্রদাহ কিংবা উত্থিত লিঙ্গে চাপ প্রয়োগ। পেরোনিজ ডিজিজের অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে ইনজেকশনের মাধ্যমে পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা। কিছু রোগের কারণেও পেরোনিজ ডিজিজ হয়। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, ধমনী শক্ত হওয়া কিংবা ডায়াবেটিস। লিঙ্গে আগাত পেলে তা ঠিকমতো সেরে না উঠলেও পেরোনিজ ডিজিজ হয়।
উপসর্গ :

লিঙ্গ শক্ত হলে ব্যথা হতে পারে, দড়ির মতো কিছু অনুভূত হতে পারে অথবা লিঙ্গ অস্বাভাবিক বেঁকে যেতে পারে। লিঙ্গ চিকন অথবা ছোট হয়ে যেতে পারে। রোগের প্রাথমিক স্তরে ব্যথা হতে পারে, যা সচরাচর ১২ থেকে ১৮ মাসে চলে যায়। শেষ দিকে লিঙ্গের উত্থান ব্যাহত হয়, অর্থাৎ পুরুষত্বহীনতা ঘটে। লিঙ্গের এ অবস্থায় যৌনমিলন যন্ত্রণাদায়ক বা কষ্টকর হতে পারে, যদিও অনেক পুরুষ রোগ থাকা সত্ত্বেও সন্তোষজনক যৌনমিলনের কথা বলে থাকেন। যেকোনো জাতি ও বয়সের পুরুষদের এ সমস্যা হতে পারে, তবে এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ৪০ বছরের অধিক ককেশিয়ান পুরুষদের মধ্যে। এ রোগ সংক্রামক নয় কিংবা কোনো ধরনের ক্যান্সারের সাথেও সম্পৃক্ত নয়। এ রোগ শুধু পুরুষের লিঙ্গে হয়।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা:

একজন দক্ষ ইউরোলজিস্ট পুরুষাঙ্গের আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা কালার ডপলার স্ক্যানিং পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করতে পারেন এবং পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন।

অপারেশনবিহীন নতুন চিকিৎসা এক্সট্রাকর্পোরাল শকওয়েভ (ESWT) :

এক্সট্রাকর্পোরাল শক ওয়েভ চিকিৎসা যা একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে পেনিস/পুরুষাঙ্গের বাইরে থেকে চামড়ার ভেতর দিয়ে অভিঘাত তরঙ্গ বা একুইস্টিক প্রেসার ওয়েভ প্রবেশ করিয়ে আক্রান্ত স্থানের ওপর প্রয়োগ করা হয়। এই অভিঘাত তরঙ্গ যান্ত্রিক কিন্তু বৈদ্যুতিক নয়। এই শ্রাবণযোগ্য কম মাত্রার শব্দ তরঙ্গ পেনিসের টিস্যুর ভেতরে প্রবেশ করে আক্রান্ত স্থানে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে। চিকিৎসার এই পদ্ধতিতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্বির ফলে আক্রান্ত স্থানটি শরীরের নিজস্ব পুর্নগঠন পদ্বতিকে কাজে লাগিয়ে স্বাভাবিক প্রদাহজনিত যে প্রক্রিয়া তাকে উদ্দীপ্ত করার মাধমে নতুন টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে, যার ফলে স্কার টিস্যুর কাঠিন্যকে ঠিক করে দেয় এবং লিঙ্গকে সোজা করে। পেরোনিজ ডিজিজ বা পুরুষাঙ্গের বাঁকা হওয়া সমস্যার ক্ষেত্রে এটি নতুন চিকিৎসা, যা পুরোপুরি নিরাপদ ও দ্রুত কার্যকর। এই পদ্বতিটি কোন প্রকার রক্তপাত, কাটাছেঁড়ার ঝামেলাবিহীন ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত। চিকিৎসার জন্য সময় লাগে বিশ থেকে তিরিশ মিনিট, সাত থেকে দশ বার বা সেশন, সপ্তাহে এক দিন করে।

পিআরপি বা পি-শট কী?

এটি একটি নন-হায়ালোরনিক এসিড ফিলার প্লাটেলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা। দেহ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে একটি বিশেষ জেলে ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ টিউবে রাখা হয়। টিউবগুলো সেন্ট্রিফিউজ মেশিনে বসিয়ে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায়- প্লাটেলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। টিউবের উপরের অংশে আলগা হয়ে থাকা প্লাজমা পেনিসের স্কার টিস্যুর বা বাঁকা জায়গায় ইনজেকশন করা হয়। ইনজেকশন করার আগে নাম্বিং ক্রিম ও লোকাল এনাসথেশিয়া কিছু সময় রাখা হয়। যা ১-৩ মাসের মধ্যে স্কার টিস্যুকে ভেঙে নতুন পেনাইল টিস্যুতে পরিণত করে।

পিআরপি কীভাবে কাজ করে:

প্লাটেলেট সমৃদ্ধ প্লাজমায় থাকে অনেক পুষ্টিকর উপাদান। যেমন-পিডিজিএফ, টিজিএফ, ডিইজিএফ, আইজিএফ, এফজি এবং টিএসপি-ওয়ান ইত্যাদি। যা আমাদের শরীরের গ্রোথ ফেক্টরকে স্টিমুলেট নতুন টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে এবং পুনরায় উত্থান হয়।

সুবিধা

সহনীয় পদ্ধতি, সহজে করা যায়, ফলাফল খুবই ভালো, নিরাপদ ও নন-এলার্জিক।

অসুবিধা

বিশেষ মেশিন প্রয়োজন, সময় ব্যয় হয় ও বিশেষ ট্রেনিং প্রয়োজন। পিআরপি বা পি-শট একটি রিজেনারেটিভ থেরাপি চিকিৎসা যা বর্তমানে পুরুষাঙ্গের বাঁকা চিকিৎসায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সারা বিশ্বে এটি এক নব-জাগরণ সৃষ্টি করেছে। পি-শট বা পিআরপি চিকিৎসার সাথে যদি শকওয়েভ নিতে পারেন তাহলে সফলতার হার অনেক বেশি বেড়ে যায়। এতে কোনো পার্শ্বক্রিয়া নেই।

লেখক: সার্টিফায়েড শকওয়েভ প্র্যাকটিশনার অ্যান্ড ম্যান সেক্সচুয়াল এক্সপার্ট ইডি ট্রিটমেন্ট সেন্টার ২০৬৬, এ্যাপোলো/এভারকেয়ার হসপিটাল লিংক রোড (রয়েল স্কুল এবং ওয়াটারপলো সুইমিং পুল-এর সঙ্গে), বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা-১২২৯, মোবা: ০১৯৭৭৬৫৬২৩৭,