নায়ক হতে কয়েক সেকেন্ডই যথেষ্ট

লিওনেল মেসি ‘ডেডলক’ ভাঙার পরও একটা ভয় কাজ করছিল। যদি গোল করে ফেলে মেক্সিকো! ঠিক তখনই ডিবক্স থেকে বাঁকানো শটে এনজো ফার্নান্দেজ বল পাঠালেন জালে। পাশেই ছিলেন মেসি। এনজোকে জড়িয়ে ধরলেন। ততক্ষণে ২১ বছর ৩১৩ দিন বয়সী এই তরুণের রেকর্ডবুকে নাম উঠে গেছে। বিশ্বকাপে মেসির পর আর্জেন্টিনার সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা এখন তিনি। ২০০৬ বিশ্বকাপে সার্বিয়ার বিপক্ষে ১৮ বছর ৩৫৭ দিন বয়সে গোল করেন লিওনেল মেসি। মেক্সিকোর বিপক্ষে মেসির অ্যাসিস্টেই ৮৭তম মিনিটে চোখ ধাঁধানো গোলটি করেন এনজো। জাতীয় দলের জার্সিতে যা প্রথম গোল তার। আর্জেন্টাইন দৈনিক লা নাসিওন তাকে নিয়ে বলেছে, ‘এনজো ফার্নান্দেজ হলো সেই মিউজিশিয়ান, যে সময়মতোই সুর তুলেছে অর্কেস্ট্রায়।’ আর্জেন্টিনার কোটি কোটি সমর্থককে স্বস্তি দেয়া কে এই তরুণ? রোজারিওর পাশের শহর সান মার্টিনে জন্ম এনজো ফার্নান্দেজের।

ফুটবলে খাতেখড়ি স্থানীয় ক্লাব লা রিকোভায়। সেখান থেকে রিভার প্লেটের ইয়ুথ একডেমিতে যোগ দেন ২০০৬ সালে। মূলত সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেও অ্যাটাকিং মিড এমনকি ডিফেন্ডিং মিডেও দক্ষ এনজো। ২০১৯ সালে রিভার প্লেটের সিনিয়র টিমে অভিষেক। তিন বছরে ৪০ ম্যাচে করেছেন ১০ গোল।
চলতি বছরের জুলাইয়ে ১২ মিলিয়ন ইউরোয় এনজোকে কিনে নেয় পর্তুগিজ জায়ান্ট বেনফিকা। পর্তুগিজ প্রিমেইরা লীগে ১৩ ম্যাচ খেলে একটি গোল ও ৩টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন লীগে ৫ ম্যাচে দুটি অ্যাসিস্ট করা এই মিডফিল্ডারকে স্কোয়াডে নিতে ভুল করেননি স্কালোনি। গত সেপ্টেম্বরে হন্ডুরাসের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে অভিষেক হয় এনজো ফার্নান্দেজের। ওই ম্যাচে বদলি হিসেবে খেলতে নামেন তিনি। এরপর আরও দুটি ম্যাচে খেলেছেন সাব হিসেবে। জিওভানি লো সেলসো ছিটকে যাওয়ায় মাঝমাঠে একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে আর্জেন্টিনার। সৌদি আরব ও মেক্সিকোর বিপক্ষে লো সেলসোর অভাব ছিল স্পষ্ট। কোচ স্কালোনি চাইলে লো সেলসোর জায়গায় শুরুর একাদশেই খেলাতে পারতেন এনজোকে। তবে দুটি ম্যাচেই তাকে সাব হিসেবে খেলিয়েছেন স্কালোনি। সৌদি আরব ম্যাচে ৩১ মিনিট মাঠে ছিলেন এনজো। ৩৬টি পাসের মধ্যে ৩০টিই ছিল সফল। ৪টি গ্রাউন্ড ডুয়েলের দুটি এবং পাঁচটি এরিয়াল ডুয়েলের ৪টি জেতেন তিনি। লক্ষ্যে শট নেন একটি। মেক্সিকোর বিপক্ষে ৩৩ মিনিট খেলেই গড়ে দেন ব্যবধান। ৩৫ বার বলে টাচ করেছেন এনজো। ২৭ পাসের ২১টিই ছিল সফল। ৫টি গ্রাউন্ডের ৩টি এবং দুটি এরিয়াল ডুয়েলের একটি জিতেছেন তিনি। এনজোকে নামানো হয় গুইদো রদ্রিগেজের জায়গায়।

গুইদো মোটামুটি ভালো খেললেও অফেন্সিভ দিকটায় ছিলেন দুর্বল। এনজো নামার পরই আক্রমণের গতি বেড়ে যায় আর্জেন্টিনার। ম্যাচের পর এনজো বলেন, ‘শৈশবের স্বপ্ন ছিল এই জার্সি একদিন গায়ে চড়াবো। আজ বিশ্বকাপে গোল করার স্বপ্নটাও পূরণ হয়ে গেল। আজকের জয় নিয়ে আমি খুবই খুশি। জয় আমাদের প্রাপ্য ছিল। আর্জেন্টিনা হতে যারা মাঠে এসে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন এবং যারা দেশে থেকে আমাদের পাশে ছিলেন, এই জয় তাদের জন্যই। আমাদের লক্ষ্য আরেকটি জয়। যেটি নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।’ ৮৭তম মিনিটে এনজোর গোলটা আসে মূলত কর্নার কিক থেকে। তাকে কিছু একটা বলেছিলেন মেসি। এরপর এনজোকে শর্ট পাস বাড়ান মেসি। আর ডিবক্স থেকে বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন এনজো। কী বলেছিলেন মেসি? সংবাদমাধ্যম লা নাসিওনকে এনজো বলেন, ‘তিনি আমাকে কর্নারের কাছে আসতে বলেছিলেন।’ এনজোর এমন পারফরম্যান্সে বিস্মিত নন মেসি। তিনি জানতেন, এই তরুণের মাঝে কিছু একটা আছে।

ম্যাচের পর মেসি বলেন, ‘এনজো আমাকে অবাক করেনি। আমি তাকে চিনি। ট্রেনিংয়ে প্রতিদিন দেখছি ওকে। গোলটা তার প্রাপ্য ছিল। কারণ, সে অসাধারণ একজন খেলোয়াড় এবং আমাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাকে নিয়ে আমি খুবই আনন্দিত।’ ম্যাচের সময় ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে গ্যালারিতেই ছিলেন এনজোর স্ত্রী ভেলেন্তিনা কারভান্তেস। এক ভিডিওতে দেখা গেছে গোলের পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন তিনি। স্যোশাল মিডিয়া স্টোরিতে ভেলেন্তিনা লিখেছেন, ‘প্রতিদিন তোমাকে আরও বেশি ভালোবাসি প্রিয়।’ এনজোর কথাতেও স্ত্রী সন্তানদের জন্য আবেগ ঝরেছে। তিনি বলেন, ‘গোলে পর প্রথমেই আমি আমার পরিবার পরিজন, স্ত্রী এবং মেয়ের কথা ভাবছিলাম। ভাবছিলাম সেসব বন্ধুদের কথা, যারা এখানে আমাকে সাপোর্ট দিতে এসেছে।’