সোমালিয়ায় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে নিহত ১০০, আহত ৩০০

সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর একটি ব্যস্ত স্থানে জোড়া গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ নিজেই এ খবর দিয়েছেন। তিনি বলেন, যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সন্তান কোলে নিয়ে থাকা মা’ও রয়েছে। এছাড়া ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিন শতাধিক। এ হামলার জন্য জিহাদি গোষ্ঠী আল-শাবাবকে দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট। আহতদের চিকিৎসার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, এরইমধ্যে নিজেদের এক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করেছে আল-শাবাব। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার এই সহযোগী সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরেই খেলাফতের দাবিতে সোমালিয়া জুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। গত আগস্টে মোগাদিশুতেই একটি জনপ্রিয় হোটেলে হামলা চালিয়ে অন্তত ২১ জনকে হত্যা করে তারা। সেসময় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আল-শাবাবের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যদিও তিনি ক্ষমতায় এসেছেন মাত্র পাঁচ মাস আগে।

শনিবারের বিস্ফোরণ দুটি হয় কয়েক মিনিটের ব্যবধানে।

এগুলো এত শক্তিশালী ছিল যে আশেপাশের ভবন এবং যানবাহন ধ্বংস হয়ে যায়। রয়টার্স নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আঘাত হানে। এরপর আহতদের উদ্ধারে যখন মেডিকেল টিম আসে তখন দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়। আল-শাবাবের উদ্দেশ্য ছিল যত বেশি সম্ভব মানুষকে হত্যা করা। স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র সাদিক জানান, শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে দুটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিলে রাজধানীতে সহিংস চরমপন্থা, বিশেষ করে আল শাবাব গোষ্ঠীকে মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা চলাকালেই এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
প্রায় পাঁচ বছর আগে এই একই স্থানে একটি লরি বিস্ফোরণে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল। এটিকে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা মনে করা হয়। শনিবারের হামলার পর, নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের খুঁজতে শত শত মানুষ ঘটনাস্থলের কাছে জড়ো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বলেন, আমি এখানে সোমালি জনগণকে বলতে এসেছি যে- এই ধরনের হামলা আর ঘটতে দেব না ইনশাল্লাহ। এই হামলার মাধ্যমে জিহাদিরা দেখাতে চেয়েছে যে তারা এখনও বেঁচে আছে। যদিও তারা সরকারী বাহিনীর হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিত হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, যারা গণহত্যার শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যে মা ও শিশুরাও রয়েছে। বাবা, এমনকি শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরাও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তিনি আরও জানান, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তিনি আহতদের সার্বিক চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।

সোমালিয়ায় আফ্রিকান ইউনিয়ন মিশন বলেছে, এই হামলা প্রমাণ করে যে- আল-শাবাবকে ধ্বংসে চলমান সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, কাতার এবং জার্মানি শনিবারের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। আল-শাবাব প্রায় ১৫ বছর ধরে সোমালিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে যুদ্ধ করছে। এই গোষ্ঠীটি দক্ষিণ ও মধ্য সোমালিয়ার বেশিরভাগ অংশে সক্রিয় রয়েছে। তবে তারা প্রায়ই রাজধানী মোগাদিশুতে ভয়াবহ হামলা চালায়।