বিশ্বে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর অন্যতম পাকিস্তান: বাইডেন

সমন্বয় ছাড়াই পাকিস্তানের হাতে যেহেতু পারমাণবিক অস্ত্র আছে, তাই বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর অন্যতম হতে পারে এ দেশটি। এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এ মন্তব্যে পাকিস্তানে সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা বাইডেনকে এ মন্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, এ তথ্য ভিত্তিহীন। ক্ষমা চাওয়া উচিত বাইডেনের। বৃহস্পতিবার ডেমোক্রেটিক কংগ্রেশনাল ক্যাম্পেইন কমিটির রিসেপশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন জো বাইডেন। সেখানেই তিনি ওই মন্তব্য করেন। শনিবার এ বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের অনলাইন ডন।

জো বাইডেনের ওই ভাষণের একটি লিখিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটে।

এতে বলা হয়েছে, আমি মনে করি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ হতে পারে পাকিস্তান। কোনো সমন্বয় ছাড়াই তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে। পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ মন্তব্য করেন বাইডেন। তিনি বলেন, বিশ্ব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। দেশগুলো তাদের মিত্রদের বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে। প্রকৃতপক্ষে আমি মনে করি এবং প্রকৃত সত্য হলো- বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা কোনো কৌতুক নয়। এমনকি আমাদের শত্রুরাও আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, এ বিষয়ে আমরা কি করি সেদিকে।
জো বাইডেন বলেন, অনেক কিছুই ঝুঁকিতে ছিল। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়ে এমন অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আছে যুক্তরাষ্ট্রের, এর আগে কখনো এই সক্ষমতা ছিল না। জো বাইডেন প্রশ্ন রাখেন কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের পর আপনাদের কেউ কি কখনো চিন্তা করেছিলেন যে, এমন একজন রাশিয়ান নেতা আসবেন, যিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দেবেন? তাতে তিন থেকে চার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে? আপনাদের কেউ কি এটা ভেবেছিলেন যে, এমন একটা পরিস্থিতি আসবে, যেখানে রাশিয়ার সঙ্গে তুলনামূলকভাবে, ভারতের সঙ্গে তুলনামূলক এবং পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনামূলক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে যাবে চীন?

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে জো বাইডেন অভিহিত করেন, যিনি জানেন তিনি কি চান। কিন্তু তার আছে বহুবিধ সমস্যা। বাইডেন বলেন, কিভাবে আমরা তা মোকাবিলা করবো? রাশিয়ায় যা চলছে, তার তুলনায় আমরা কিভাবে এটাকে মোকাবিলা করবো? এবং আমি মনে করি বিশ্বে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি হতে পারে পাকিস্তান।
পাকিস্তান সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের প্রশাসনের সময়ে পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয় তার দেশ। তিনি বলেছেন, পারমাণবিক অবস্থার দায় পাকিস্তানের। তারা তাদের জাতীয় স্বার্থে এটাকে নিরাপত্তা দিতে যথার্থভাবে সক্ষম। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হবে। টুইটারে নওয়াজ শরীফ বলেছেন, কোনোভাবেই আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি অন্য দেশের জন্য হুমকি নয়। স্বাধীন অন্য সব দেশের মতো, নিজেদের রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার অধিকার সংরক্ষণ করে পাকিস্তান।

ওদিকে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) নেতারা ক্ষমতা হারানোর আগে থেকেই বলে আসছেন, পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠী পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। তারা জো বাইডেনের মন্তব্যকে লুফে নিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রধান ইমরান খান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মন্তব্য নিয়ে তার দুটি প্রশ্ন আছে। এক হলো- আমাদের পারমাণবিক সক্ষমতার বিষয়ে জো বাইডেন এই অপ্রত্যাশিত উপসংহারে কিসের ভিত্তিতে এলেন? আমি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলাম, আমি তো জানি আমাদের কাছে আছে সবচেয়ে নিরাপদ পারমাণবিক কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মতো সারাবিশ্বে যুদ্ধে লিপ্ত নই। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পরে পাকিস্তান কি কখনো আগ্রাসন দেখিয়েছে? প্রশ্ন রাখেন ইমরান খান।

জো বাইডেনের এই মন্তব্যের ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তানে বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন ইমরান খান। তিনি বলেছেন, জো বাইডেন যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে এটাই দেখানো হয়েছে যে- আমদানি করা সরকারের পররাষ্ট্রনীতি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তারা তো দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তুলছে। এটাই কি নতুন করে সম্পর্ক মেরামত? ইমরান খান টুইটারে বলেন, এই সরকার অযোগ্যতার সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার হয়তো জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আপোষ করবে। ‘বাজে মন্তব্যের’ জন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী শিরিন মাজারি। তিনি টুইটে বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রধর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য হুমকি। কারণ, আপনাদের পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর আপনাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ২০০৭ সালে বি৫২ বোমারুবিমান ৬টি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে উড্ডয়ন করেছে। এ বিষয়ে কেউই জানতেন না আগেভাগে। শিরিন মাজারি যুক্তরাষ্ট্রকে দায়িত্বহীন এক পারমাণবিক অস্ত্রধর সুপারপাওয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এমন মন্তব্যের পরেও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও ‘আমদানি করা সরকারের’ নীরব থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। পিটিআইয়ের জেনারেল সেক্রেটারি আসাদ উমর বলেছেন, অন্যের দিকে পাথর ছোড়ার আগে সুরম্য গ্লাসে নির্মিত বাড়িতে বসে নেতাদের আগে চিন্তা করা উচিত। তিনি সমন্বয়ের অভাবের কথা বলেছেন। তবে কি বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বোঝাতে চেয়েছেন? ওদিকে পিটিআই সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী দাবি জানিয়েছেন বাইডেনকে অবিলম্বে তার এই বক্তব্য প্রত্যহার করতে হবে। ওদিকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী খুররম দস্তগির। তিনি বাইডেনের মন্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বলেছেন, এক বার নয়। বার বার আন্তর্জাতিক এজেন্সি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র যাচাই করেছে। তারা বলেছে, আমাদের কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিরাপদ আছে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আছে এখানে। অন্যদিকে জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি বলেছেন, বাইডেনের এমন মন্তব্য যথার্থ নয়।