শ্রেণিকক্ষে হিজাব ইস্যুতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিভক্ত রায়

ভারতে হেডস্কার্ফ বিতর্কে বিভক্ত রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শ্রেণিকক্ষে মুসলিম ছাত্রীরা হেডস্কার্ফ পরতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত রায় দেয়ার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টের। কিন্তু কোর্ট এ বিষয় পরিষ্কার রায় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, দু’জন বিচারক পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। এ বছর কর্ণাটকে স্কুল, কলেজে মুসলিম নারীদের হিজাব ইস্যুতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মার্চে কর্ণাটক হাইকোর্ট রায় দেয় যে, ইসলামে হিজাব পরা অত্যাবশ্যক নয়। হাইকোর্টের এই রায় বৃহস্পতিবার বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক। অন্য একজন বিচারক বলেন, হাইকোর্টের ওই আদেশ ভুল ছিল। হিজাব পরা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। দুই বিচারকের এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
হিজাব বিতর্ক ভারতে কমপক্ষে ১০ মাস ধরে চলছে। এ নিয়ে মেরুকরণ হয়েছে। মানুষ এর পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছে। কিন্তু মুসলিম নারী শিক্ষার্থীরা হিজাব বা হেডস্কার্ফ পরাকে তাদের ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত অধিকার বলে দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় বিজেপি দলের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে এ নিয়ে। অবশেষে তা চলে যায় আদালতে। এক পর্যায়ে কর্ণাটকের আদালত শ্রেণিকক্ষে হিজাব নিষিদ্ধ করে। কিন্তু মুসলিম শিক্ষার্থীরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ফলে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এতে ব্যর্থ হওয়ার পর এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে, হিজাব বিতর্ক অব্যাহত থাকবে। বিচারকরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভারতের প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ করেছেন বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করতে এবং সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে।

বৃহস্পতিবার দুই বিচারকের বেঞ্চ থেকে বিভক্ত রায় দেয়া হয়। এর মধ্যে একজন বিচারক হেমন্ত গুপ্ত। তিনি দুই বিচারকের এই বেঞ্চের নেতৃত্বে আছেন। তিনি কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়কে বহাল রাখেন। এ নিয়ে শুনানিকালে তার কিছু মন্তব্য সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে। তিনি একজন আইনজীবীকে বলেছিলেন, হিজাব পরার অধিকারের পক্ষে যুক্তি দিতে যে, আপনি এটাকে অযৌক্তি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন না। একই সঙ্গে তার কাছে জানতে চান, পোশাক পরার অধিকারের মধ্যে পোশাক খোলার অধিকারও অন্তর্ভুক্ত থাকবে কিনা? কিন্তু আরেক বিচারক সুধাংশু ধুলিয়া তার রায়ে বলেন, কর্ণাটক হাইকোর্ট ভুল পথ নিয়েছে। হিজাব একটি অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় চর্চা কিনা সে বিষয়ে তারা জোর দিয়েছে। হিজাব পরা প্রকৃতপক্ষে পছন্দের বিষয়। এর চেয়ে বেশি বা কম কিছু নয়।