শীর্ষ অবস্থানে ১০ ব্যাংক ও পাঁচ এনবিএফআই

দ্বিতীয়বারের মতো দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) সাসটেইনেবল রেটিং ২০২১ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে চারটি সূচকে এগিয়ে থাকা ১০টি ব্যাংক ও পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। গত বছর স্থান পাওয়া চারটি ব্যাংক এবারের রেটিংয়ে বাদ পড়েছে। একই সঙ্গে বাদ পড়েছে গতবারের তালিকার তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও।

যে চার সূচকের ভিত্তিতে এ রেটিং প্রণয়ন করা হয়েছে সেগুলো হলো টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক (সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইন্ডিকেটর), সবুজ পুনঃঅর্থায়ন (গ্রিন রিফাইন্যান্স), সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (সিএসআর) এবং মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা (কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবিলিটি)।

২০২১ সালের সাসটেইনেবল রেটিংয়ে শীর্ষ দশে থাকা ব্যাংকগুলো হলো ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড ও দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড। এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক নতুন করে শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে। আর ২০২০ সালের রেটিংয়ে শীর্ষ দশে থাকা আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) এবার বাদ পড়েছে।

সাসটেইনেবল রেটিংয়ে শীর্ষ পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। ২০২০ সালের রেটিংয়ে হজ ফাইন্যান্স লিমিটেড, সৌদি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (সাবিনকো) ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেড শীর্ষ পাঁচে স্থান পেয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল রেটিংয়ের শীর্ষ দশে স্থান পেয়ে আনন্দিত বলে জানান সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংক ধারাবাহিক উন্নতির পথে রয়েছে। এটির প্রতিফলনই বাংলাদেশ ব্যাংকের রেটিংয়ে দেখা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেটিংয়ে শীর্ষ দশে স্থান পাওয়া যেকোনো ব্যাংকের জন্যই গৌরবের।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলোকে সুশাসন, শুদ্ধাচার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে অনুপ্রাণিত করতেই সাসটেইনেবিলিটি রেটিংয়ের শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সিএসআর ব্যয়, গ্রিন ফাইন্যান্স, কোর ব্যাংকিং কার্যক্রম, খেলাপি ঋণের হারসহ বেশকিছু সূচকের ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সহযোগিতায় সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ রেটিংটি তৈরি করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র আরো বলেন, ব্যাংকের পাশাপাশি ২০২১ সালের রেটিংয়ে শীর্ষ পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করছি, এ রেটিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে শুদ্ধাচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত হবে। পাশাপাশি সিএসআর ব্যয় ও গ্রিন ফাইন্যান্সে আরো বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স পলিসির নির্দেশনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনার আলোকে গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো সাসটেইনেবল রেটিং-২০২০-এর শীর্ষ ১০ ব্যাংক ও পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয়।

রেটিংয়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার হয়েছে টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক, সবুজ পুনঃঅর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম ও মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা। এর মধ্যে টেকসই অর্থায়ন নির্দেশকের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবুজ অর্থায়ন, ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, গ্রামীণ অর্থায়ন, নারী ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, কৃষিতে টেকসই অর্থায়ন, সবুজ অর্থায়নের ক্যাটাগরি ও প্রকল্পের পরিমাণ, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সবুজ ব্যাংকিংয়ের চর্চাকেও এ মানদণ্ডে অন্যতম নির্ধারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট খেলাপি ঋণের হার, ঝুঁকি ভারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধনের অনুপাত, লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও, নিট স্টেবল ফান্ডিং রেশিও, কোর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, সম্পদের বিপরীতে আয়, ইকুইটির বিপরীতে আয়, নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন ও এফিশিয়েন্সি রেশিওর মতো বিষয়গুলোর ভিত্তিতে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও জলবায়ু ঝুঁকি তহবিলের অনুদানের অর্থ ব্যয়ের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় এসেছে। পাশাপাশি সবুজ পুনঃঅর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়েছে বার্ষিক পুনঃঅর্থায়নের হার, খাত ও পণ্যভিত্তিক পুনঃঅর্থায়নের পাশাপাশি গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের ডলার ও ইউরো কম্পোনেন্টের ভিত্তিতে।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বণিক বার্তাকে বলেন, যে কয়েকটি সূচক আমলে নিয়ে সাসটেইনেবল রেটিং তৈরি করা হয়েছে, তার প্রতিটি সূচকেই ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমরা অভ্যন্তরীণ সুশাসন চর্চার পাশাপাশি দেশের মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে ইসলামী ব্যাংক। সিএসআরের বাইরে কেবল ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ড নামে একটি তহবিল আছে। গণমুখী তত্পরতার কারণেই ইসলামী ব্যাংক দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হতে পেরেছে।