খুলনা:: ঘূর্ণিঝড় ফণীর কিছুটা প্রভাব খুলনার উপকূলীয় এলাকায় এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। যে কারণে শুক্রবার (০৩ মে) দুপুর থেকে বাড়ছে বাতাস ও নদ-নদীর জোয়ারের পানি।
উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছার লোকজনকে নিকটস্থ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
আবার বাতাস শুরুর পর থেকে স্বেচ্ছায় কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে আসা শুরু করেছেন। সহায় সম্পদ রক্ষার জন্য পুরুষেরা ঘরে থেকে গেলেও বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা আশ্রয় কেন্দ্র চলে এসেছেন। কোনো কোনো এলাকার মানুষ ঘর-বাড়ি ছাড়তে না চাইলে তাদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রথমে দাকোপ উপজেলার ৪নং খোনা খাটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোনা কে বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে কয়রা ও পাইকগাছার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষ আনা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায়। পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য চলছে মাইকিং।
খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দুপুরের দিকে কিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন। মানুষ এখানে আসতে চান না। প্রাইমারি স্কুল কাম আশ্রয় কেন্দ্রে মিলিয়ে প্রায় ১২-১৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৪ আনা মানুষেরও জায়গা হয় না। পর্যাপ্ত জায়গা, পানি, টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই আসতে চান না।
খুলনা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে জেলার ৩২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় আশ্রয় কেন্দ্রে আসছেন। যারা আসতে চাচ্ছেন না তাদের পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় প্রশাসন বুঝিয়ে আনছেন।
তিনি জানান, কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছার বেশ কিছু দূর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছে
সাতক্ষীরা::ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে নদ-নদীতে। অন্ধকার হয়ে আসছে প্রকৃতি। ঘর-বাড়ি ছেড়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
শুক্রবার (৩ মে) সকালে আলো ঝলমলে পরিবেশ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি বিরূপ চিত্র ধারণ করতে দেখা গেছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, সকালে ভালো আবহাওয়া থাকলেও এখন বৃষ্টি হচ্ছে। সেইসঙ্গে ঝড় হচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি। সকাল থেকেই মাইকিং শুরু হয়েছে। ভেবেছিলাম আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া লাগবে না। কিন্তু উপায় নেই।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার আবুল হোসেন নদ-নদীর পানি বাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত আশাশুনি ও শ্যামনগরের ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিকেল নাগাদ সব মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হবে। বিশেষ করে আশাশুনি ও শ্যামনগরে শিশু, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী নারী এবং বয়স্কদের আশ্রয়কেন্দ্র সরিয়ে আনা হয়েছে। এরইমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণায়ল থেকে ৩১৬ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা ও তিন হাজার ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার জেলায় পৌঁছেছে। যা সব উপজেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সাতক্ষীরায় ১৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ স্কুল-কলেজগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, বর্তমানে সাতক্ষীরায় ৭ নম্বর বিপদসংকেত চলছে। সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ফণী উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এসময় ৪-৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সবাইকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সোলার, চার্জার লাইট ও মোমবাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠনসহ অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝড় পরবর্তী বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামত করতে টিম ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা, উপজেলা প্রশাসন, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল ও স্বেচ্ছাসেবক সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান ডিসি মোস্তফা কামাল।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আফম রুহুল হক, পুলিশ সুপার (এসটি) সাজ্জাদুর রহমান, সিভিল সার্জন রফিকুল ইসলাম, প্রেসক্লাব সভাপতি আবু আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপ্পী প্রমুখ।