৫ম দফায় ভাসানচরে যাচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা   

কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া।
মার্চের শুরুতে উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবির থেকে সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ নোয়াখালীর ভাসানচরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ওই রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সদস্যদের নাম, ব্লক, শেড, ক্যাম্প নম্বর ও হেড মাঝির নাম ইত্যাদি ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে জমা দিয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে দায়িত্বরত সিআইসির কাছে তালিকা জমা দিয়ে ভাসানচরে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। ৫ম দফায় আরও সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে। ওই রোহিঙ্গারা এখন থেকে স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিচ্ছে। খুশি মনে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সিআইসির কাছে নাম জমা দিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেনা। আগে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা ভাসানচরে বা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি না হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করত সাধারণ রোহিঙ্গাদের। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি ক্যাম্পে আর নেই। সরকারের কঠোর মনোভাব ও উদ্বাস্তুদের যেখানে ইচ্ছা, সরকার সেখানেই রোহিঙ্গাদের রাখবে ঘোষণার পর উস্কানিদাতা স্বার্থান্বেষী মহল দূরে সরে এসেছে। ফলে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে তাদের নাম ঠিকানা জমা দিচ্ছে নির্ভয়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। পরিবেশের যা ক্ষতি হয়েছে, তা কখনও পুষিয়ে দেয়ার মতো নয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে রোহিঙ্গারা ভিনদেশী আশ্রিত জাতিগোষ্ঠী হিসেবে বাস করেনি। কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গত সাড়ে তিন বছরে মাদক, ডাকাতি, খুনাখুনি, অপহরণ-লাশ গুম এবং চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে। শিবিরে ইয়াবা বিক্রি এবং মাদকের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে মারামারি খুনাখুনি লেগেই আছে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, নজরদারি এবং রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ হাতে নিয়ে সরকার এ পর্যন্ত ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান কবে হবে, জানে না কেউ। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের আগে চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ যৌথভাবে মিটিং করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একমতে পৌঁছার সম্ভাবনা দেখা দিলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার চেয়ে ভাসানচর উন্নত বলে দাবি করে ভাসানচরে যেতে রাজি হয়।
সূত্র জানায়,চার দফায় এ পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। উপরন্তু রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়ভাবে নানা সঙ্কট ও সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে প্রতিনিয়ত। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় চৌদ্দ লাখের বেশি। সরকারী হিসাব মতে ৫ আগস্ট (২০২০) ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে সাত লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন নতুন করে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়াও আশ্রয়প্রার্থী এতিম শিশু রয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪১ জন। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বছরে গড়ে জন্ম নিচ্ছে ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু। বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার একর ভূমি ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা।