বিয়ের আসর থেকে যৌতুকের টাকার জন্য চলে গেল বরপক্ষ

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল চন্দ্রখোলা গ্রামে, সকাল থেকে চলছে আমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়ন। সন্ধায় কনে সাজানো হয়েছে। রাতে শোল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ সিংহড়া গ্রামের মৃত ননী গোপাল রায়ের ছেলে শ্রী সজীব রায় (২৮) বর সেজে এলেন।

সঙ্গে তার দুই ভাই রাজীব রায় (৩০) প্রকাশ রায় (২২) ও তার আত্মীয়-স্বজন। উভয় পক্ষের অতিথি খাওয়া দাওয়া শেষ করেন। এরপর পুরুহিত মশাই শুরু করেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।

সোমবার ঘড়ির কাটায় তখন রাত প্রায় ২টা ছুঁই ছুই। বধু সেজে কন্যা জয়ন্তী বেপারী(২৩) ও বর শ্রী সজীব রায়(২৮) যথারীতি বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন।
এমন সময় বিয়ের আসরে যৌতুকের টাকা পরিশোধের দাবি তুলে বরপক্ষ। টিভি, ফ্রিজ, স্বংর্ণা-অলংকার ও যৌতুক হিসেবে নগদ তিন লাখ টাকা দাবি করেন বরের স্বজনরা।

এই কথা শুনে হঠাৎ যেন আকাশ ভেঙে পড়লো কনের পিতা জগদীশ বেপারীর মাথায়। এসময় বরের ভাই রাজীব রায়, প্রকাশ রায়সহ বরপক্ষের স্বজনরা যৌতুকের টাকা না পেয়ে কনের বাবা-মা ও বাড়ির লোকদের অপমান করে। এইসময় কনের বাবা জগদীশ বেপারীর তাদের কাছে আকুতি জানায়। বরের ভাই রাজীব রায়, প্রকাশ রায়সহ বরপক্ষের লোকজন কনের বাবা ও কনের বাড়ির লোকজনের ওপর হামলা করে ও বাড়ি আসবাপত্র ও বিয়ের অনান্য সামগ্রী ভাঙচুর করে বরকে নিয়ে চলে আসে।

কান্না জড়িত কন্ঠে যুগান্তরকে কন্য জয়ন্তী বেপারী বলেন, ৫ বছর বছর আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয় উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ সিংহড়া গ্রামের শ্রী সজীব রায়ের সঙ্গে।

পরিচয়ের সূত্রধরে গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ে দু,জন। পরিবারে না জানিয়ে গোপনে হিন্দু বিবাহ বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি-২২(১)(ক) অনুযায়ী দুজনের মধ্যে বিবাহ হয় গত ২২ জুন ২০১৭ সালে। বিষয়টি গোপন ছিল অনেক দিন। পরে দুই পরিবারে সম্মতিতে গত সোমবার সামাজিকভাবে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। কিন্তু ছেলের ভাই ও স্বজনরা বিয়ের আসরে যৌতুকের দাবি তুলে আমার বাবা মাকে অপমান করে এবং গায়ে হাত তুলে। বাড়ির আসবাপত্র ভাংচুর করে চলে যায়।

এ বিষয়ে স্থানীয় নিলুফা বেগম বলেন, বিয়ে বাড়িতে আমি কনের পক্ষের আমন্ত্রিত মেহেমান হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। বরপক্ষ যৌতুকের জন্য কন্যার বাবা, মা স্বজনদের সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে। দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় তারা রাত ২টায় চলে যায়।

কনের বাবা জগদীস বেপারী বলেন, আমার মেয়েকে ও পটিয়ে গোপনে বিয়ে করে। এতদিন মেয়ের কোন খোঁজখবর নেইনি। সামাজিকভাবে দুপরিবারের সম্মতিতে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। ছেলের পক্ষকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি বিয়ের বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করার জন্য। এখন আবার যৌতুক দাবি করছে । আমি গরিব মানুষ আমার কাছে কোন টাকা নাই। এখন আমি কী করবো বলেন!

এই বিষয়ে শোল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান তুহিনুর রহমান তুহিন বলেন, যৌতুক নেওয়া ও দেওয়া অপরাধ। এই ঘটনাটি আমি জানতাম না, খুবই দুঃখজনক বিষয়। মানবিক দিক বিবেচনা করে ছেলের পক্ষের উচিত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা।