কমছে না গরমের তেজ, হাঁসফাঁস অবস্থা

নিউজ ডেস্ক:: কমছে না গরমের তেজ। তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা কষ্ট পাচ্ছে বেশি। খেটে খাওয়া মানুষেরও কষ্টের শেষ নেই। প্রতিদিনই হিটস্ট্রোকে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরও তেমন কোনো সুবার্তা দিতে পারেনি। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে। এখানে তাপমাত্রা ছিল ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দাবদাহ থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টি চেয়ে স্রষ্টার দরবারে হাত তুলেছেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। বিভিন্ন জেলায় আদায় করা হয়েছে ইসতিসকার নামাজ। এমন পরিস্থিতিতে তাপপ্রবাহে নিজেকে সুরক্ষা রাখতে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে ৪ দফা সুপারিশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নাটোরের বড়াইগ্রামে কৃষি জমিতেই এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নের সাতইল বিলে তার মৃত্যু হয়। নিহত কৃষকের নাম রকুল হোসেন (৩০)। তিনি গাড়ফা উত্তরপাড়া গ্রামের হাজী আব্দুর রহিমের ছেলে। স্থানীয় পল্লীচিকিৎসক আসাদুজ্জামান রঞ্জু বলেন, সকাল থেকে কৃষি জমিতে কাজ করছিলেন তিনি। তীব্র দাবদাহ সহ্য করতে না পেরে পাশের জলাশয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়। পরে অন্য কৃষকরা তার মৃতদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। চান্দাই ইউপি চেয়ারম্যান শাহনাজ পারভীন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। অন্যদিকে রাজধানীর ওয়ারী এলাকার গুলিস্তান টোলপ্লাজার পাশের রাস্তায় মো. আলমগীর শিকদার (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আলমগীর যাত্রাবাড়ীর পশ্চিম শেখদি এলাকার মৃত জমির শিকদারের ছেলে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, ওয়ারী থেকে আসা ওই ব্যক্তিকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে আনা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের মাধ্যমে জানতে পারি যে, ওই ব্যক্তি অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকে মারা যেতে পারেন। এর আগে সোমবার রাতে পটুয়াখালীর বাউফলে হিটস্ট্রোকে মোহাম্মদ শাহ আলম (৫০) নামের এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পুলিশের ঢাকা গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত ছিলেন। শনিবার তিনি ছুটিতে গ্রামের বাড়ি আসেন। সোমবার রাত ৯টায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাউফল উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই ওই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়। তিনি হিটস্ট্রোক করেছিলেন বলে পরিবারকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক। বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে বরিশালে পাঠানো হয়েছিল।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে। এখানে তাপমাত্রা ছিল ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নীলফামারীর ডিমলা ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায়। এখানে তাপমাত্রা ছিল ২১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াম। সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও পটুয়াখালী জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। এতে আরও বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে। বৃষ্টিপাত প্রসঙ্গে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চার দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেগুলো হলো- তীব্র গরম থেকে দূরে থাকুন, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিন; প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করুন। হেপাটাইটিস এ.ই. ডায়রিয়াসহ প্রাণঘাতী পানিবাহী রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে একাধিকবার গোসল করুন; গরম আবহাওয়ায় ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন, সম্ভব হলে গাঢ় রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলুন; গরম আবহাওয়ায় যদি ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, তীব্র মাথাব্যথা হয়, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হয়, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিন।