রণসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের গ্যালারি উৎসবমুখর হয়ে ওঠার কথা ছিল আজ। সব ঠিক থাকলে নিজেদের এ স্টেডিয়ামেই পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলতে নামতো শ্রীলঙ্কা। ভাগ্যের ফেরে ম্যাচটি হচ্ছে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে শ্রীলঙ্কা থেকে টুর্নামেন্ট সরে যায় আরব আমিরাতে। ২৮শে আগস্ট শুরু হয় এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের এ লড়াই। যার নিষ্পত্তি হচ্ছে আজ। ফাইনালে রাত ৮টায় মুখোমুখি হচ্ছে দুই জায়ান্ট।
এশিয়া কাপে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার চতুর্থ ফাইনাল এটি। আগের তিন ফাইনালে দু’বার জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ১৯৮৬তে দ্বিতীয় আসরে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জেতে লঙ্কানরা।
২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ৩৯ রানে পরাজিত করে পাকিস্তানও তাদের প্রথম এশিয়া কাপ শিরোপার স্বাদ নেয়। ২০১৪তে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে উড়িয়ে পঞ্চম শিরোপার দেখা পায় শ্রীলঙ্কা।
টুর্নামেন্টর শুরুর আগে অনেকেরই ধারণা ছিল এবারে এশিয়া কাপের ফাইনাল হবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। শক্তি বিচারে এ দুটি দল অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে তেমন আশা ছিল না। আফগানিস্তানের কাছে প্রথম ম্যাচে বিধ্বস্ত হওয়ায় মোটামুটি ধরেই নেয়া হয় সুপার ফোরের আগেই ছিটকে যাবে দাসুন শানাকার দল।
এরপর কী দারুণভাবেই না ঘুরে দাঁড়ালো শ্রীলঙ্কা! বাংলাদেশকে হারিয়ে ছন্দে ফেরা। সেই ছন্দ তারা ধরে রাখলো সুপার ফোরেও। প্রথমে আফগানিস্তান, তারপর ভারত আর শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকেও উড়িয়ে শিরোপার দাবি জোরালো করেছে শ্রীলঙ্কা। দুবাই স্টেডিয়ামকেই আজ প্রেমাদাসা বানিয়ে খেলবে তারা। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেই এমন প্রত্যয় ঝরেছিল লঙ্কানদের কণ্ঠে। যাত্রার শুরুতে হোঁচট খায় পাকিস্তানও। শেষ ওভারের থ্রিলারে ভারতের কাছে ৫ উইকেটের হারের পর হংকংকে উড়িয়ে সুপার ফোরে আসে বাবর আজমরা। সেখানেও প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। এবার রোহিত শর্মার দলকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শোধ তোলে দলটি। পরের ম্যাচে নাসিম শাহর বীরত্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়ে ৮ বছর পর এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার কাছে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে যদিও হেরে যায় তারা। কিন্তু ম্যাচটিতে ছিলেন না পাকিস্তানের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। পেসার নাসিম শাহ ও লেগস্পিন অলরাউন্ডার শাদাব খানকে রাখা হয় বিশ্রামে। মাঠে তাদের অভাব ছিল লক্ষণীয়। পাকিস্তানের হেড কোচ সাকলাইন মুশতাকের দাবি, ফাইনালে ভিন্ন চেহারায় দেখা যাবে তার শিষ্যদের। সাকলাইন মুশতাক বলেন, ‘তাদের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। তারা গেম চেঞ্জার এবং ম্যাচ উইনার। নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেই তারা আজকের অবস্থানে এসেছে। ম্যাচ জেতার জন্য যেমন প্যাশন দরকার প্রত্যেকের মাঝেই তা আছে। আমি তাদের ওপর আস্থা রাখছি।’
শুক্রবার দুবাইয়ে আগে ব্যাট করে ৫ বল বাকি থাকতেই ১২১ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। সর্বোচ্চ ৩০ রান আসে অধিনায়ক বাবর আজমের ব্যাট থেকে। চলতি আসরে এটি বাবরের সর্বোচ্চ। ৫ ইনিংসে করেছেন সাকুল্যে ৬৩ রান। তবে সাকলাইন মুশতাক মনে করেন না বাবর ফর্মহীনতায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং তার ব্যাটিং দেখে, সে বুঝতে পারবে বাবর আসলে দুর্ভাগা। ভালো খেলার পরও রান পাচ্ছে না। সে ক্লাস ব্যাটসম্যান। কেউ যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করে সে বলবে বাবরের ফর্মে সমস্যা নেই, ভাগ্য তার পক্ষে যাচ্ছে না।’
শ্রীলঙ্কার স্পিন বিভাগই পাকিস্তানের জন্য মূল হুমকি। শুক্রবার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও মহেশ থিকসানার ১২ ওভারে মাত্র ৬০ রান তোলে পাকিস্তান। উইকেট খোয়ায় ৬টি। ম্যাচে ২১ রানে ৩ উইকেট নেয়া লেগস্পিনার হাসারাঙ্গা বলেন, ‘আমাদের দলটা তরুণ। আমি সবসময় ডট দেয়া এবং উইকেট টু উইকেট বল রাখার চেষ্টা করি। এটাই আমার সাফল্যের উপায়। আমার মনে হয়, মহেশ থিকাসানাও একই কাজ করছে। উইকেটগুলো ফ্ল্যাট। কিন্তু ভালো জায়গায় বল ফেলতে পারলে আপনি সফল হবেন।’
সুপার ফোরেই ফাইনালের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাবর আজমদের মাত্র ১২১ রানে আটকে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় দাসুন শানাকার দল। ম্যাচশেষে লঙ্কান অধিনায়ক বলেন, তাদের বোলাররা যেকোনো দলের ব্যাটিং লাইন-আপের জন্য ভয়ঙ্কর।
ম্যাচপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দাসুন শানাকা বলেন, ‘এমন ফলাফল সবসময়ই কাম্য। আমাদের দলের বোলিং কম্বিনেশন দারুণ। বাঁহাতি পেসার, অফস্পিনার, লেগস্পিনার- যে বৈচিত্র্য আমাদের রয়েছে তা অসাধারণ। যেকোনো দলের ব্যাটিং লাইন-আপকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে আমাদের বোলাররা।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে অতিরিক্ত ১৭ রান দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। দুটি নো বল এবং ১৫টি ওয়াইড দিয়েছে বোলাররা। তা নিয়ে শানাকা বলেন, ‘আমি মনে করি, খেলায় অতিরিক্ত রান দেয়া চিন্তার বিষয়। আরো কিছু বিষয়ে আমাদের উন্নতি করতে হবে। পরবর্তী ম্যাচে যদি আমরা দ্রুত উইকেট নিতে পারি তাহলে (ফাইনালে) ভালো ফলাফল আশা করতে পারি।’









