শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র গতিপথ পরিবর্তন হয়ে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানলে তা ভয়াবহ হবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ছামছুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এটি বর্তমানে গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।’বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঘূর্ণিঝড় ফণী বিষয়ে জরুরি প্রস্তুতি সভায় তিনি এসব কথা বলেন।ছামছুদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘এই মুহূর্তে এর গতিপথ যেভাবে রয়েছে তাতে প্রথমে এটি ভারতের উড়িস্যায় আঘাত করবে, এরপর পশ্চিম বাংলায় আঘাত করবে। কিন্তু এর গতিপথ যদি পরিবর্তন হয়ে সমুদ্রের কোলঘেঁষে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে এটি খুলনা, মংলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম হয়ে ভয়াবহ আকারে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।’
এসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, রংপুর হয়ে দিনাজপুরের দিকে যেতে পারে। সেইসঙ্গে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে আঘাত হানতে পারে। তবে ৪ মে সকাল নাগাদ ফণী এ আঘাত হানতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ঘূর্ণিঝড়টি যদি এভাবে এগুতে থাকে তাহলে এটা প্রথমে ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানবে, এরপর পশ্চিম বাংলায়। পরে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চল হয়ে সাতক্ষীরায় আঘাত করবে।
‘আর যদি দিক পরিবর্তন করে বাংলাদেশের দিকে আসে তাহলে খুলনা, মংলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।’
প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য
প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, ‘মন্ত্রণালয় থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এনডিআরসি প্রতিনিয়ত সংবাদ দিয়ে যাচ্ছ্। সিপিসির হেড কোয়ার্টার এবং উপকূলীয় ১৯টি জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব জেলার উপজেলা পর্যায়েও কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। রেডক্রিসেন্ট এর কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। উপকূলীয় আর্মি স্টেশনগুলোতেও ঢাকা থেকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা আমাদের আস্বস্ত করেছেন তারা প্রস্তুতি রেখেছেন। সিপিপির ৫৬ হাজার ভলেন্টিয়ারকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা প্রস্তুত আছে।’
‘তারা ইতোমধ্যে মাইকিং করে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছেন। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এসব জেলার প্রশাসকদের কাছে দুইশ মেট্রিকটন চাল পৌঁছে দেয়া হয়েছে এবং প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে ৫ লাখ করে টাকাও দেয়া আছে।’
একইসঙ্গে ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। স্যালাইনের জন্য সুপেয় পানির জন্য পানির ট্রাক পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ লন্ডনে যাওয়ার আগে তার মুখ্য সচিবকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা আশা করি মানুষের হতাহতের ঘটনা আমরা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পারবো।
তবে ফসলর ক্ষতিটা রক্ষা করা যাবেনা। ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে প্রাণীসম্পদ রাখার জায়গা নেয় সেইজন্য যতটুকু সম্ভব হয় প্রাণীসম্পদকেও যেন আশ্রয়কেন্দ্রে আনা যায় সেজন্য আমরা স্বেচ্ছাসেবকদর নির্দেশ দিয়েছি।
আমাদের যে প্রস্তুতি আছে তাতে এটাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারবো। আজ ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও আমরা এখানে বসে বাংলাদেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে কাজ করছি। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকার সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
তাদেরকে সংশ্লিষ্ট কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে সবাইকে সহযোগিতার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি আমরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি- যোগ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, আপনারাও জানেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা রোল মডেলে পরিণত হয়েছি। আমাদের ফায়ার সার্ভিস এবং রেডক্রিসেন্টসহ সবগুলো সংস্থা সুনামের সঙ্গে কাজ করেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস, আবহাওয়া অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।