পূজন সেন, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ রবিবার সূর্যব্রত উপলক্ষ্যে মেলা বসে জ্যৈষ্ঠপুরায়। প্রাচীনকাল থেকে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে লালন করে আসছে জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় এ সূর্যব্রত মেলাটি।এ বছর তিনদিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার (১৩ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া মেলায় মানুষের ভিড়। মঙ্গলবার রাতে এ মেলা সাঙ্গ হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি।
মেলায় ফুলের ঝাঁড়ু, বাঁশ-বেতের তৈরি ডালা, কুলা, চালইনসহ নানান সামগ্রী, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পিঠা তৈরির সরঞ্জাম, গৃহস্থালী দা, চুরি, বটি, পিঁড়ি, জলচৌকি, এমনকি ফলমূল, শাকসবজি, শুটকিসহ নানান পসরার সম্ভার সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মেয়েদের সাজসজ্জা ও খেলনা সামগ্রীর দোকানগুলোতে ভিড় মেলায় আগতদের। তবে আর যা-ই কিনুন না কেন ‘ফুলের ঝাঁড়ু- পোড়া আলু না নিয়ে নয়’ বলে একটি প্রবাদ এই এলাকায় প্রচলিত রয়েছে।
মেলায় কি শুধু পণ্য কিনতে আসা ? না তা নয়। হই-হল্লা হবে। নাগর দোলায় চড়া। ফুচকা, আইসক্রিম খাওয়া অথবা জিলেপি, মিষ্টি, আমৃতি খাওয়া তো যায়। ঝালমুড়ি, গরম গরম পিঁয়াজু, চপ, বেগুনিসহ নানান প্রকারের খাদ্যের দোকানও বসেছে। শুধু ঘুরে-ঘুরে দেখ আর মজা নাও।
তবে এ মেলায় ফুলের ঝাঁড়ু, পোড়া আলু কেনার ধুম পড়ে প্রতি বছর। পোড়া আলু বিক্রি আসা মৃদুলের সাথে। তিনি জানান,মেলার প্রথমদিনের বিকেলের মধ্যে ১০হাজার টাকার পোড়া আলু বিক্রি করে ফেলেছেন। প্রতি কেজি ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।
প্রতিটি ফুলের ঝাঁড়ু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। ক্রেতাদের ওপচে পড়া ভিড় ঝাঁড়ু কিনতে। এছাড়া কুলা, চালইন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকায়।
মেলা কমিটির সভাপতি শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারম বলেন, প্রাচীনকাল থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। মেলা বসার ফলে জমিটিও সূর্যব্রত বিল নামে পরিচিত। যদিও আগের মতো এখন সেই জৌলুস নেই। তারপরও গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্ঠা করে যাচ্ছি। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও এ মেলার আয়োজন করছি।
বাঁশ-বেতের তৈরি সামগ্রী নিয়ে আসা বিক্রেতা নূর উদ্দিন বলেন, বেশি বিক্রির উদ্দেশ্যে মেলায় আসা। এই সামগ্রীগুলো এমনিতে খুব একটা বিক্রি হয় না আজকাল। প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে গেছে। তবে এসব সামগ্রী বিক্রি হলে এ মেলায় ভালো দাম পাবেন বলে আশা তার।
সারা বছরের জন্য অনেকেই আসেন এ মেলা থেকে সামগ্রী কিনতে। তেমনি এসেছেন অরজিৎ চৌধুরী। তিনি ঘরের জন্য ঝাঁড়ু, কুড়াল, শুকনো বড়ই (কুল), চিরতা (ভেষজ এক ধরণে ঔষধি গাছ) ও পান খাওয়ার চুন কিনে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ মেলায় এমন অনেক কিছুই পাওয়া যায় যা সচরাচর মেলে না। খৈ-মুড়ি রাখার জন্য টিনের খাতি (বাক্স), পাতার চাটাইসহ আরো অনেক গ্রামীণ তৈজসপত্র এ মেলায় পাওয়া যায়।









