বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক মাহফুজ উল্লাহ এখনো বেঁচে আছেন। তিনি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় মাহফুজ উল্লাহর মেয়ে নুসরাত হুমায়রা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে।
নুসরাত মোবাইলে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘আমার বাবা এখনো বেঁচে আছেন। তবে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। গতকাল রাতে তার শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয় এবং চিকিৎসকরা তাকে ওষুধ দেওয়া বন্ধ করেন।’
নুসরাত বলেন, মাহফুজ উল্লাহর মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ হয়েছে তা সঠিক নয়। ‘আমি তার পাশেই রয়েছি। আমরা তার শান্তিপূর্ণ প্রস্থানের অপেক্ষায় রয়েছি।’
সন্ধ্যার পর রিজভী সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তিনি মাহফুজ উল্লাহর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে আমরা জানতে পারি যে, দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব মাহফুজ উল্লাহ আজ ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। এই সংবাদের ওপর ভিত্তি করে বিএনপির পক্ষ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি শোকবার্তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় যে, জনাব মাহফুজ উল্লাহ মৃত্যুবরণ করেননি, তবে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। দোয়া করি-মহান রাব্বুল আলামিন যেন জনাব মাহফুজ উল্লাহকে দ্রুত সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু দান করেন।’
গত ২ এপ্রিল সকালে ধানমণ্ডির গ্রিন রোডের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে মাহফুজ উল্লাহকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ১০ এপ্রিল রাত ১১টা ৫২ মিনিটে মাহফুজ উল্লাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মাহফুজ উল্লাহ ১৯৫০ সালের ১০ মার্চ নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র রাজনীতির কারণে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে তাকে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ছাত্রাবস্থাতেই মাহফুজ উল্লাহ সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িয়ে পড়েন। বাংলাদেশের একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এ পত্রিকার সাথে জড়িত ছিলেন। মাঝে চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন তিনি। রেডিও ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছেন।
মাহফুজ উল্লাহ আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন সক্রিয় পরিবেশবিদ এবং বাংলাদেশে তিনিই প্রথম পরিবেশ সাংবাদিকতা শুরু করেন।
বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখা মাহফুজ উল্লাহর বইয়ের সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো President Zia of Bangladesh : A political Biography, ULFA & THE INSURGENCY IN ASSAM, যাদুর লাউ, যে কথা বলতে চাই, অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন : গৌরবের দিনলিপি (১৯৫২-৭১)।